[ক] ভূমিকা—সাহিত্য-সৃষ্টির নামকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। নামকরণের মাধ্যমে সাহিত্য-পাঠের বিষয় পাঠকের কাছে ইঙ্গিতপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিষয়ভিত্তিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী প্রভৃতি দৃষ্টিকোণে নামকরণ করা হয় সাহিত্যের। কবি মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ধানক্ষেত থেকে’কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’কবিতাটির নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক।
[খ] কবিতার মূলভাব—দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে কবির জননীর পাশে থাকার অঙ্গীকার আলোচ্য কবিতার উপজীব্য। যেসময় রাজনৈতিক হানাহানিতে সমাজে নেমে এসেছে গভীর অবক্ষয়, শাসকের রাজনৈতিক চোখরাঙানিতে মানুষের মধ্যে থেকে মুছে গেছে ভালোবাসা-সহানুভূতি-সম্প্রীতিবোধ, যেসময় রাজনীতি পরিণত হয়েছে রণনীতিতে, প্রতিদিন রক্তাক্ত হয়েছে সমাজের প্রতিটি কোণ ; সেই অবক্ষয়িত সমাজ-রাজনৈতিক পরিবেশে কবি অনুভব করেছেন জননী-জন্মভূমির কান্না। অগণিত ব্যক্তিমানবীর বেদনা দেশজননীর হৃদয়কেই ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল।
কবি দেখেছিলেন মানুষ হারিয়ে ফেলেছে প্রতিবাদের ভাষা। কবি বুঝেছিলেন ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যতের ভার দিয়ে অসহায় বাংলার মানুষ বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কবি অনুভব করেছিলেন তাঁর কলম থেকে সূচনা হতে পারে বিপ্লবের ৷ তাই তিনি তাঁর কবিতায় বিদ্রোহের বাণী দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন।
[গ] সার্থকতা বিচার—কবির সজাগ বিবেক ‘ক্রন্দনরতা জননী’ জন্মভূমির পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। কবি সমাজের কাছে দায়বদ্ধ একজন নাগরিকের মতো সমাজের বিপদে আতঙ্কিত হয়েছেন। নৈতিকতা, মূল্যবোধের চরম অবমূল্যায়নের যুগে কবির মনে প্রশ্ন জেগেছে—
“ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
এখন যদি না থাকি
কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া
কেন তবে আঁকাআঁকি?”
সমগ্র কবিতা জুড়ে কবির প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে এবং তার মূল কারণ অসহায়া ক্রন্দনরতা জননী। জননীর পাশে কবি দাঁড়াতে চান তার কবিতা-অস্ত্র নিয়ে। এই সূত্রে কবিতাটির নামকরণ সার্থক হয়েছে।