“কেন ভালোবাসা, কেন-বা সমাজ / কীসের মূল্যবোধ!”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

[ক] প্রসঙ্গ—মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে।

জমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শাসকের রাজনীতির নগ্নতা প্রত্যক্ষ করে কবি ক্রুদ্ধ হয়েছেন। অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নিহত শহীদকে দেখেও যদি কবির বিবেক না জেগে ওঠে, তবে ভালোবাসা, মূল্যবোধ সবই অর্থহীন হয়ে যায়।

[খ] তাৎপর্য—সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে শাসকের রক্তচক্ষু দেখে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়েছিল। শিল্পীর সৃষ্টিকর্ম অর্থহীন হয়ে পড়ছিল। মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল ভালোবাসা-সমাজ-মূল্যবোধ। ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ অথবা ‘যে মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন / জঙ্গলে তাকে পেয়ে’ও যখন সাধারণ মানুষ নির্বিকার তখন কবি বিস্মিত হন। আসলে স্বদেশের সীমাহীন দুর্দশায় কবি শুনতে পেয়েছেন জননীর কান্না। জননীর হাহাকারে ক্রুদ্ধ কবি অনুতপ্ত বোধ করেছেন। তাঁর বিবেক জাগরিত হয়েছে।

ক্রন্দনরতা জননীকে কোনোভাবেই তিনি ত্যাগ করতে পারেন না। স্বজনের মৃত্যু দেখে বিধির বিচার চেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ থাকতে পারেন না। সমাজের প্রতি কবির কর্তব্য এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে কবি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে পারেন না। ভাইয়ের শবদেহ দেখে প্রতিহিংসা জাগ্রত না হলে ভালোবাসা, সমাজ মূল্যহীন হয়ে পড়বে। এই বক্তব্যই কবিতার উদ্ধৃত অংশে প্রকাশ পেয়েছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত