বহির্জাত প্রক্রিয়া ও ভূমিরূপ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন | প্রশ্নমান = ২

১—বহির্জাত প্রক্রিয়া কী?

[] বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন সংঘটিত হলে তাকে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে। একে পর্যায়ন প্রক্রিয়াও বলে।

২—বিভিন্ন বহির্জাত প্রক্রিয়ার নাম লেখ।

[] নদী প্রবাহ, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, জোয়ারভাটা, বায়ুর উষ্ণতা, আর্দ্রতা প্রভৃতি।

৩—পর্যায়ন কাকে বলে?

[] এককথায় পর্যায়ন হলো—অবরোহন ও আরোহনের মিলিত ফল। অসমতল ভূমি ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে সমতলে পরিণত হলে তাকে পর্যায়ন বলে।

৪—অবরোহন কাকে বলে? বা নগ্নীভবন কাকে বলে?

[] যে প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কাজের মাধ্যমে উচু ভূমি নিচু ভূমিতে পরিণত হয়, সেই প্রক্রিয়াকে অবরোহন বলে। [] অবরোহন প্রক্রিয়ার অপর নাম নগ্নীভবন। এই প্রক্রিয়া হলো আবহবিকার+ক্ষয়ীভবন+পুঞ্জিত ক্ষয়ের মিলিত ফল।

৫—আরোহন প্রক্রিয়া কাকে বলে?

[] যে প্রক্রিয়ায় সঞ্চয়কার্যের ফলে নিচু ভূমি উঁচু হয় সে প্রক্রিয়াকে বলে আরোহণ। এই প্রক্রিয়া আসলে অবরোহণ প্রক্রিয়ার একেবারে উল্টো।

৬—আবহবিকার কাকে বলে?

[] ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে সেই স্থানে পড়ে থাকলে সেই প্রক্রিয়াকে বলে আবহবিকার।

৭—ক্ষয়ীভবন কাকে বলে?

[] বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের স্থান পরিবর্তন হলে তাকে ক্ষয়ীভবন বলে।

৮—পুঞ্জিত ক্ষয় কাকে বলে?

[] শিথিল শিলাস্তর অভিকর্ষের টানে ভূমির ঢাল বরাবর নিচের দিকে নেমে এলে তাকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে।

৯—দোয়াব কী?

[] দুটি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে দোয়াব বলে।

১০—জলবিভাজিকা কাকে বলে?

[] যে উচ্চভূমি দুই বা তার বেশি নদী অববাহিকাকে আলাদা করে দেয়, তাকে জলবিভাজিকা বলে। সাধারণত পাহাড়, পর্বত জলবিভাজিকার কাজ করে। যেমন—হিমালয় পর্বত।

১১—ধারণ অববাহিকা কাকে বলে?

[] পার্বত্য অঞ্চলে নদী অববাহিকার যতটুকু অঞ্চল অধিকার থাকে তাকে ধারণ অববাহিকা বলে।

[] যেমন, গঙ্গার নদীর ক্ষেত্রে গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ধারণ অববাহিকার অন্তর্গত।

১২—নদীক্ষয়ের প্রক্রিয়া গুলোর নাম লেখ।

[] জলপ্রবাহ ক্ষয় [] অবঘর্ষ ক্ষয় [] ঘর্ষণ ক্ষয় [] দ্রবণ ক্ষয়।

১৩—নদীক্ষয়ের নিয়ন্ত্রকগুলোর নাম লেখ।

[] জলের গতিবেগ [] শিলার প্রকৃতি [] নদীবাহিত পদার্থের পরিমাণ।

১৪—নদীর বহন প্রক্রিয়াগুলোর নাম কী কী?

[] দ্রবণ [] ভাসমান [] লম্ফদান [] আকর্ষণ

১৫—ষষ্ঠঘাতের সূত্র কাকে বলে?

[] নদীর গতিবেগ বেশি হলে নদীর বহন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলে বহন ক্ষমতা ২৬ বা ৬৪ গুণ হারে বৃদ্ধি পায়। একেই ষষ্ঠঘাতের সূত্র নামে পরিচিত।

১৬—কিউমেক ও কিউসেক বলতে কী বোঝো?

[] নদীর জলপ্রবাহ মাপার একটি নির্দিষ্ট একক হল কিউসেক এবং কিউমেক।

[] প্রতি ১ সেকেন্ডে যত কিউবিক ফুট জল প্রবাহিত হবে তাকে প্রকাশ করা কিউসেক দিয়ে। আর, প্রতি ১ সেকেন্ডে যত কিউবিক মিটার জল প্রবাহিত হবে তাকে প্রকাশ করা হয় কিউমেক দিয়ে।

১৭—কোন অবস্থায় নদী সঞ্চয় কাজ করে?

[] নদীর ঢাল কমে গেল এবং গতিবেগ কমে গেলে। [] জলের পরিমাণ কমে গেলে। [] নদীতে পলির পরিমাণ বেড়ে গেলে।

১৮—আদর্শ নদী কাকে বলে?

[] যে সব নদীতে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন—এই তিনটি গতিই স্পষ্ট লক্ষিত হয় তাকে, আদর্শ নদী বলে।

[] গঙ্গা, সিন্ধু প্রভৃতি আদর্শ নদীর উদাহরণ।

১৯—গঙ্গা নদীর তিনটি গতির পরিচয় দাও।

[] উচ্চগতি—উৎস গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত।

[] মধ্যগতি—হরিদ্বার থেকে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত।

[] নিম্নগতি—রাজমহল পাহাড় থেকে মোহনা অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত।

২০—গিরিখাত কী? বা I আকৃতির উপত্যকা কাকে বলে?

[] উচ্চগতিতে নদীর গতিবেগ এতটাই বেশি থাকে যে নিম্নক্ষয় এই পর্যায়ে বেশি হয়। আর নিম্নক্ষয়ের কারণেই নদী উপত্যকা গভীর হয় এবং I আকৃতি বিশিষ্ট হয়। একে গিরিখাত বলে।

[] নেপালের কালীগণ্ডকী নদীর গিরিখাত পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত।

২১—ক্যানিয়ন কাকে বলে?

[] শুষ্ক অঞ্চলে নদীর অধিক নিম্নক্ষয়ের কারণে নদীর গভীরতা খুব বেশি হয়। এই ধরণের গভীর, সংকীর্ণ, শুষ্ক অঞ্চলের গিরিখাতকে বলে ক্যানিয়ন বলে।

[] কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অন্যতম একটি ক্যানিয়ন।

২২—র‍্যাপিডস্‌ কাকে বলে?

[] পার্বত্য অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা থাকায় নদী ধাপে ধাপে নেমে আসে। তাকে র‍্যাপিডস্‌ বা খরস্রোত বলে।

[] বড়ো মাপের র‍্যাপিডস্‌কে জলপ্রপাত বলে।

২৩—ক্যাসকেড কাকে বলে?

[] অসংখ্য র‍্যাপিডস্‌ পাশাপাশি অবস্থান করলে তাকে ক্যাসকেড বলে।

২৪—জলপ্রপাতের পশ্চাৎ অপসারণ বলতে কী বোঝায়?

[] জলপ্রপাত যেখানে সৃষ্টি হয় সেখানে ভূপৃষ্ঠের উপরে কঠিন শিলা অবস্থান করে। একসময় উপরের ঝুলতে থাকা কঠিন শিলা ভেঙে যায় এবং জলপ্রপাত পিছনে সরে যায়। একে জলপ্রপাতে পশ্চাৎ অপসারণ বলে।

২৫—প্লাঞ্জপুল বা প্রপাতকূপ কাকে বলে?

[] জলপ্রপাতের জল যেকাহে পতিত হয় সেখানে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে প্রপাতকূপ বলে।

[] প্রপাতকূপ হ্রদ হিসাবে অবস্থান করে।

২৬—মন্থকূপ বা পটহোল কী?

[] বিশাল শিলাখণ্ডের আঘাতে নদীগর্ভে যে বড় গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে মন্থকূপ বলে।

[] নদীর উচ্চগতিতে জলের গতিবেগ বেশি থাকে বলে এই মন্থকূপ সৃষ্টি হয়।

২৭—পলল ব্যজনী কী?

[] পর্বতের পাদদেশে নদীর ঢাল কমে গেলে নদীর পলি, বালি, নুড়ি সঞ্চিত হয়। এর উপর দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে এই ভূমিভাগ হাতপাখার মতো দেখতে হয়। একে পলল ব্যজনী বলে।

[] নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে এই ভূমিরূপ গঠিত হয়।

২৮—মিয়েন্ডার কাকে বলে?

[] নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে এই ভূমিরূপ গঠিত হয়।

[] নদীর গতিবেগ কম হলে কঠিন শিলা ক্ষয় কম হয়। আর সেই কারণে নদী একেবেকে প্রবাহিত হয়। এই আঁকাবাঁকা নদীপথকে ‘মিয়েন্ডার’ বলে।

[] তুরস্কের মিয়েন্ডারস নদীর নাম অনুসারে এই নামকরণ।

২৯—প্লাবনভূমি কাকে বলে?

[] নদীর নিম্নপ্রবাহে নদী অগভীর হয়। বর্ষাকালে নদীর জল বেড়ে দুকূল ছাপিয়ে তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করে। এইভাবে পলি জমে সেই বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভরাট হয়, তাকে প্লাবনভূমি বলে।

৩০—স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি কাকে বলে?

[] নদীর বন্যায় নদীর তীর বরাবর পলি সঞ্চয়ে উঁচু হয়, যাকে লিভি বা স্বাভাবিক বাঁধ বলে। এই বাঁধ স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয়।

৩১—খাঁড়ি কী?

[] নদীর মোহনা অঞ্চলে অর্থাৎ নদী যেখানে সাগরে মেশে সেখানে ফানেল আকৃতির নদী-মোহনার সৃষ্টি হয়, যা খাঁড়ি নামে পরিচিত।

[] নডির এই খাঁড়িগুলিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।

৩২—ব-দ্বীপ নামকরণের কারণ কী?

[] নদীর মোহনায় গঠিত দ্বীপ দেখতে মাত্রাহীন ‘ব’ –এর মতো বা গ্রিক অক্ষর ‘ডেল্টা’-এর মতো। ত্রিভুজের মতো দেখতে হয় । এইকারণে এর নাম ব-দ্বীপ।

৩৩—সুন্দরবন অঞ্চলের কয়েকটি নিমজ্জিত দ্বীপের নাম লেখ।

[] লোহাচড়া, নিউমুর, ঘোড়ামারা।

৩৪—ব-দ্বীপ গঠনের দুটি অনুকূল পরিবেশের নাম লেখ।

[] মোহনায় নদীর ঢাল কম হওয়া।

[] পলির পরিমাণ অধিক হওয়া।

৩৫—আমাজন নদীর মোহনায় ব-দ্বীপ নেই কেন?

[] আমাজন নদী প্রচুর জল পরিবহন করে।

[] আমাজন নদীর মোহনার ঢাল খাড়া।

[] মোহনায় অধিক সমুদ্রস্রোত।

 

 

 

To be continued…..

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত