বাসন্তিকস্বপ্নম | বাংলা অনুবাদ

পশ্চিমবঙ্গ দ্বাদশ শ্রেণির সংস্কৃত ‘সাহিত্যগাথা’ পাঠ্য বইয়ে ‘বাসন্তিকস্বপ্নম্‌’ নামের একটি নাটকের প্রথম অঙ্কের অংশবিশেষ গৃহীত হয়েছে। এই নাট্যাংশের সরল অর্থ , বাংলা অনুবাদ বা বঙ্গানুবাদ এখানে দেওয়া হলো।

[রাজা ইন্দ্রবর্মা, কনকলেখা এবং প্রবেশ]

রাজা – প্রিয়ে কনকলেখা! আজ এই অমাবস্যার আর বিলম্ব নেই। মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও আমার মন উৎকণ্ঠিত, আমি মদন শরে আক্রান্ত হয়ে বাস করছি। চন্দ্র কিন্তু অত্যন্ত নিষ্ঠুর। সে ক্ষীয়মাণ হয়েও [সময়] আমার কাছে শীঘ্র ক্ষয় পাচ্ছে না। হে সখী! আমাদের বিবাহের জন্য আমি খুবই উৎসুক। হে সুন্দরী! এখন কী করি? নাড়িকা অর্থাৎ একদণ্ড কালও আমার কাছে বহু যুগ বলে মনে হচ্ছে।

কনকলেখা – প্রভু, চারটি দিন প্রায় চারটি রাত্রির মতো ক্ষণকালেই নিদ্রার মধ্যে শীঘ্রই দেখতে দেখতে কেটে গিয়ে অমাবস্যাকে নিয়ে আসবে। যে রাত্রিতে আমাদের দুজনের পরিণয় উৎসব হবে সেই রাত্রি এসে পড়বে। অতএব কেন কষ্ট পাচ্ছেন (উদবিগ্ন হচ্ছেন) মহারাজ?

রাজা – ওরে প্রমোদ ! যাও এখন আমাদের নগরের প্রতি পথে। এমন কাজ করো যাতে যুবকেরা মহোৎসবে ডুবে গিয়ে অসীম আনন্দে ভরপুর হয়ে যায়। দুঃখকে যমপুরীতে (যমের নগরে) পাঠিয়ে দাও, সর্বত্র আনন্দকে ছড়িয়ে দাও।

প্রমোদ — মহারাজ, যা আদেশ করেন। (এই বলে প্রণাম করে বেরিয়ে যায়)

রাজা – হে প্রেমিকা কনকলেখা, তাই আজ সেই নিন্দিত পথ ত্যাগ করে মহোৎসবে আনন্দ প্রসাধনের মধ্যে তোমাকে বিবাহ করব।

[নেপথ্যে] পায়ের শব্দ শোনা গেল। কেউ একজন বৃদ্ধ ক্রোধে এবং শোকে আবিষ্ট হয়ে আসছেন দেখা যাচ্ছে। তাকে অনুসরণ করছে এক চন্দ্রমুখীও।

[ইন্দুশর্মা ও কৌমুদী প্রবেশ করল।]

ইন্দুশর্মা – (হাত তুলে) আমাদের পৃথিবীপতির জয় হোক।

রাজা – ইন্দুশর্মা, আপনাকে প্রণাম। আপনাকে কিছু কার্যের প্রার্থী বলে মনে হচ্ছে ?

ইন্দুশর্মা – মহারাজ। এইটি আমার কন্যা। আমার আদেশ উল্লঙ্ঘন করবে বলে আমি খুব দুঃখিত। আমার প্রতি দয়া করে মনোযোগী হোন। যদি এই নীচ কন্যা আমার মত না অনুসরণ করে অর্থাৎ মকরন্দকে বিবাহ না করে তাহলে আমাদের দেশের আচার অনুসরণ করে পিতার আদেশ অমান্যকারী সন্তানের যে দণ্ড তা সে ভোগ করবে–এই আদেশ দিয়ে আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন এই প্রার্থনা করি।

রাজা – (কৌমুদীর প্রতি) বলো বালিকা, সময়ের বিরোধিতা করার কী যুক্তি? তোমার বর মকরন্দ তো রমণীয় তরুণ!

কৌমুদী – মহারাজ! বসন্তও তেমনই!

রাজা – বালিকা! বসন্ত প্রিয়দর্শন হলেও তোমার বাবার সমর্থন রয়েছে কিন্তু মকরন্দের ওপর, তাই মকরন্দই তোমার পক্ষে বেশি যোগ্য।

কৌমুদী – যদি আমার বাবা আমার চোখ দিয়ে বসন্তকে দেখেন তবে তিনি আমার মত-কে অবশ্যই সম্মান করবেন।

রাজা – তবু তোমার পিতার বিবেচনাই তোমায় মেনে চলা উচিৎ।

কৌমুদী – করুণানিধি, অধীনের এই অপরাধ ক্ষমা করুন! জানি না কী কারণে আমার মনে এইরূপ দৃঢ় সিদ্ধান্ত জন্মেছে৷ আমি ভুলে যাচ্ছি আমার কী করা উচিত।

রাজা – ভদ্রে, তুমি দেখতে সুন্দর। তোমার বয়সও কম। যদি পিতার মতের অনুসরণ না-করো তবে মরণকে শরণ করো, নতুবা যাবজ্জীবন বিবাহ না-করে থাকো। যারা বংশে এমন করে, সময় ও আচারের বিরোধিতা করে তাদের কীভাবে সুখ হতে পারে? তোমার এরূপ মতি কখনও কল্যাণ করবে না, কখনও সুখকর নয়। অতএব তোমার পিতার আদেশ পালন করা উচিত।

কৌমুদী – মহারাজ, আমি বসন্তকে ত্যাগ করে অন্য কাউকে তার স্থানে বসাতে পারবো না। তার জন্য জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করতে রাজি আছি ৷ যতদিন বাঁচব বিবাহ না-করেই থাকব। এই মন্দভাগিনীর এটাই প্রতিজ্ঞা।

[নেপথ্যে মৃদঙ্গধ্বনি]

কনকলেখা – মহারাজা, সংগীতশালার অভ্যন্তরে অনেকে আমাদের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে।

রাজা – অন্য কার্যে ব্যস্ত থাকায় এইসব ভুলেই গেছি। অতএব তাড়াতাড়ি যেতে হবে। কৌমুদী, ভালোভাবে বিবেচনা করে পিতাকেই অনুসরণ করো, নইলে মরণকে ভজনা করো। এটাই আমাদের দণ্ড ব্যবস্থা–এটা বুঝে নাও । প্রিয়া কনকলেখা, এখন যাই।

[সবাই প্রস্থান করল]

Go Home (info)

 

 

আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন

👇👇👇👇

Join Telegram (demo)

Join Facebook (open)

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত