--------------------------------------------------
--------------------------------------------------


--------------------------------------------------
--------------------------------------------------

‘ভোর’ শব্দটি ‘শিকার’ কবিতায় কোন্ কোন্ ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।

‘ভোর’ শব্দটি ‘শিকার’ কবিতায় কোন্ কোন্ ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।

(উত্তর) সূচনা—কবি জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় একই ভোরের দুটি রূপ প্রকাশ পেয়েছে, ঘটনাগত ও কাহিনিগত ভিন্নতায় তারা পৃথক। কবি একটি ‘ভোরে’ রূপসী বাংলার মোহময় প্রকৃতিকে চিত্রিত করেছেন; অন্যদিকে দেখিয়েছেন নাগরিক সভ্যতার কলুষিত চিত্র।

প্রথম ভোর—রাত্রির অন্ধকারের বুক চিরে ধীরে ধীরে পুব আকাশে ভোরের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখনও আকাশে জেগে থাকা একটিমাত্র তারা যেন বাসরঘরের সলজ্জ মেয়েটির মতো রহস্যময়। ভোরের প্রকৃতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন মাদকতা ছড়িয়ে থাকে, তাই কবির কল্পনায় আকাশের তারাটি নীল মদের গেলাসে মিশরীয় রমণীর বুকের থেকে রাখা মুক্তোর মতো উজ্জ্বল। নীল আকাশ ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল। চারদিকের পেয়ারা আর নোনা গাছ যেন টিয়ার পালকের মতো সজীব। শিশির কণায় সকালের আলোর প্রতিফলনে বন আর আকাশ ময়ূরের ডানার মতো ঝলমল করে। দেশোয়ালিদের জ্বালানো আগুন সূর্যের আলোয় বিবর্ণ হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ‘ভোর’—কবিতায় ভোরের দ্বিতীয় অনুষঙ্গ ভোগবাদী লালসায় করুণ। সারারাত চিতাবাঘিনির থেকে আত্মরক্ষা করে একটি হরিণ তার অবসন্ন শরীরকে আবেশ দেওয়ার জন্য নদীর তীক্ষ্ম শীতল ঢেউয়ে নামে। রাতের হিমকুঞ্চিত জরায়ু ছিঁড়ে আত্মরক্ষার বিজয়ী উল্লাসে সে সূর্যের আলোয় বর্শার মতো স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করতে চায়। আর তখনই নাগরিক মানুষের লালসার একটা গুলির অদ্ভুত শব্দ তাকে নিধন করে। শিকারীর পাশবিকতায় দৃশ্যপট তখন মচকা ফুলের পাপড়ির মতো লাল, রক্তাক্ত।

  • এভাবেই ‘ভোর’ শব্দের প্রয়োগগত পার্থক্য কবিতাটিকে ব্যঞ্জনাময় করে তোলে।
error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত