সংস্কৃত গীতিকাব্য হিসেবে ‘মেঘদূতে’র মূল্যায়ন করো। অথবা, কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্য সম্বন্ধে লেখ।

‘মেঘদূতম্’ মহাকবি কালিদাসের অপূর্ব সৃষ্ট গীতিকাব্য। কবিচিত্তের তীব্র বিরহবেদনা যেন ভাষায় মূর্ত হয়ে উঠেছে এই কাব্যে। মন্দাক্রান্তা ছন্দে লেখা প্রায় ১১৮টি শ্লোকে রচিত প্রেমমূলক কাব্যটি ‘পূর্বমেঘ’ ও ‘উত্তরমেঘ’ নামক দুটি অংশে বিভক্ত।

কাহিনি—পূর্বমেঘ-এ বর্ণিত হয়েছে এক যক্ষের রামগিরি আশ্রমে এক বছরের জন্য নির্বাসন দণ্ডে দণ্ডিত হওয়া। সেখানে প্রিয়া বিরহে কাতর যক্ষ আকুল হৃদয়ে মেঘের কাছে মিনতি জানালেন – দূতরূপে সে যেন কুশল সংবাদ বহন করে নিয়ে যায় অলকাপুরীতে বিরহিণী যক্ষপ্রিয়ার কাছে। রামগিরি থেকে অলকাপুরা পর্যন্ত সমস্ত পথের সুদীর্ঘ বর্ণনাও রয়েছে।

       উত্তরমেঘ উত্তরমেঘের পটভূমি অলকা। অলকাপুরী সৌন্দর্যের লীলানিকেতন। উত্তরমেঘের বর্ণনায় যক্ষপ্রিয়ার অপরূপ রূপলাবণ্য ও অন্তর্বেদনার চিত্র ফুটে উঠেছে। শেষপর্যন্ত বিরহ দুঃখে, মিলনের পূর্বাভাস সূচনা করে ‘মেঘদূতম্’ কাব্যের পরিসমাপ্তি ঘটে।

গীতিকাব্য হিসেবে মেঘদূত—‘মেঘদূত’ কাব্যের বিশিষ্টতা নিচে উল্লেখিত হলো—

  • এই কাব্যে রয়েছে কবিহৃদয়ের সুতীব্র বিরহবেদনা এবং প্রিয়তমার সঙ্গে মিলনের গভীর ব্যাকুলতা।
  • মানুষের স্বপ্ন, বেদনা, কামনা কাব্যের শ্লোকে শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে।
  • বিচ্ছেদের আগুনে পুড়িয়ে প্রেমের বিশিষ্টতা দেখানো হয়েছে।
  • অপূর্ব ছন্দের দোলায় পাঠকহৃদয় দোলায়িত হয়।

মূল্যায়ন—দেশ বিদেশের নানা ভাষায় এই কাব্যটি অনূদিত হয়েছে। জার্মান কবি গ্যেটে এই কাব্যের পাঠে মুগ্ধ হয়েছেন। রসে গভীরতায়, ভাষা ও ছন্দের মাধুর্যে ‘মেঘদূত’ বিশ্বসাহিত্যে অতুলনীয়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত