--------------------------------------------------
--------------------------------------------------


--------------------------------------------------
--------------------------------------------------

জয়দেব ও গীতগোবিন্দ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। অথবা, সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে কবি জয়দেবের অবদান কতখানি তা আলোচনা করো।

ভূমিকা—খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে গৌড় রাজসভায় পঞ্চরত্নের মধ্যে জয়দেব একজন ছিলেন। অতএব তাঁর আবির্ভাবকাল খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগ। বীরভূমে অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব গ্রামে কবির জন্ম। তাঁর পিতা শ্রী ভোজদেব, মাতার নাম বামাদেবী।

গীতগোবিন্দম্

বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারের উৎকৃষ্ট গীতিকাব্যগুলির মধ্যে সংস্কৃতে রচিত গীতিকবিতাগুলি অন্যতম। গীতিময় কাব্যকে গীতিকাব্য বলে। ভক্তিমূলক গীতিকাব্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম্’।

গীতিকাব্য হিসাবে কালিদাসের ‘মেঘদূতম্’-এর পরেই যার স্থান, সেটি হল জয়দেবের ভক্তিমূলক গীতিকাব্য ‘গীতগোবিন্দম্’।

কাব্যের উৎস—শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের দ্বাদশ স্কন্ধের পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের বসন্তকালীন লীলাকে কেন্দ্র করে জয়দেব এই ভক্তিমূলক গীতিকাব্য রচনা করেন। এ ছাড়া হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণ, হাল সংকলিত গাথাসপ্তশতী প্রভৃতির প্রভাব ‘গীতগোবিন্দম্’-এ কমবেশি রয়েছে।

কাব্যের নামকরণ—’গীতগোবিন্দম্’ নামকরণটি সবদিক দিয়ে যুক্তিযুক্ত, কারণ এই কাব্যের নায়ক গোবিন্দ অর্থাৎ কৃষ্ণ

কাব্য পরিচয়—জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম্’ রাধাকৃষ্ণের চিরন্তন প্রেমলীলাকে উপজীব্য করে রচিত। এই কাব্যে ১২টি সর্গ, ৮০টি শ্লোক এবং ২৪টি গীতের সমাবেশ রয়েছে। বৈষ্ণব সাধকদের কাছে গ্রন্থটি দার্শনিক মহাকাব্যরূপে সমাদৃত।

       শ্রীরাধার কৃষ্ণ বিরহ ব্যাকুলতা এবং রাধাকৃষ্ণের মিলনবিলাস বর্ণনা—এই দ্বাদশ সর্গবিশিষ্ট কাব্যের কাহিনিসার।

কাব্যবৈশিষ্ট্য—এই কাব্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল

  • ‘গীতগোবিন্দম্’ মিলনান্তক ভক্তিমূলক গীতিকাব্য।   
  • জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম্’ নাট্যগীতের আকারে লেখা কাব্য। তবে এর গানগুলি মর্মস্পর্শী।
  • কাব্যের পাত্রপাত্রী মাত্র তিনজন সখী, কৃষ্ণ ও রাধা।
  • কাব্যের অমূল্যসম্পদ গান, যা গীতিকবিতার মতো হৃদয়ভাবের প্রকাশে ঝংকৃত।
  • জয়দেবের কাব্য সংস্কৃতে রচিত হলেও তার ভাবধর্ম একান্তভাবে লৌকিক প্রাণধর্মের অনুকূল।

মূল্যায়ন—কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় বলেছেন,

“বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্তকোমল পদে

করেছে সুরভি সংস্কৃতের কাঞ্চন-কোকনদে”।

কাব্যের রাধা-কৃষ্ণের মিলনকাহিনি যেন পরামাত্মা ও জীবাত্মার মিলন। তাই এটি ‘ভক্তিমূলক গীতিকাব্য’ হিসেবে অমর হয়ে আছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত