--------------------------------------------------
--------------------------------------------------


--------------------------------------------------
--------------------------------------------------

সার্ক কীভাবে গঠিত হয়েছিল? সার্কের উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?

(উত্তর) ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করা লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সহযোগিতা-সংস্থা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখা যায়।

আঞ্চলিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এসব সংস্থার মধ্যে অন্যতম হল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক বা South Asian Association for Regional Co-operation = SAARC।

সার্ক কীভাবে গঠিত হয়?

দক্ষিণ-এশীয় সহযোগিতামূলক একটি আঞ্চলিক সংস্থা সার্কের (SAARC) গঠনে অনেক দেশের প্রত্যক্ষ উদ্যোগ ছিল। এই সংস্থা গড়ে ওঠার পর্যায়গুলি বর্ণিত হল।

জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ : ১৯৭০ দশকের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে অঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ, বলা যায় এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি অঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। 

জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীগণ পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বো, কাঠমাণ্ডু, ইসলামাবাদ, ঢাকা প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে এসব দেশের বিদেশমন্ত্রীরা ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের দিল্লি সম্মেলনে সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

ঢাকায় সার্কের প্রতিষ্ঠা : ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

সদস্য : ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সার্ক প্রতিষ্ঠায় মোট ৭টি দেশ অংশ নেয়। এই দেশগুলি হল – ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। বর্তমানে আফগানিস্তানসহ সার্কের সদস্য ৮। সার্কের সদস্যসংখ্যা মাত্র আট হলেও বিশ্বের ১/৫ অংশ জনসংখ্যাই এর অন্তর্ভুক্ত।

সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা SAARC-এর বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ : 

  1. উন্নয়ন : সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো।
  2. জনকল্যাণ : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জনগণের কল্যাণসাধন এবং তাদের জীবনযাত্রার মনোন্নয়ন ঘটানো। 
  3. বোঝাপড়া ও শান্তিপূর্ণ সহবস্থান : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান বজায় রাখা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।
  4. আত্মনির্ভরতা : সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীনতা রক্ষা এবং আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা।
  5. অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা : সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। 
  6. নিরাপত্তা বৃদ্ধি : দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিরোধ করা। 
  7. আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদানপ্রদান ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটানো।

মূল্যায়ন : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সার্কের প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। সদস্য রাষ্ট্রগুলির নানাবিধ সমস্যার সমাধান এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্যের ক্ষেত্রে সার্ক যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছে। 

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত