(উত্তর) সূচনা : কোরিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত জাপানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর কোরিয়ার ৩৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখার উত্তরাংশ সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে এবং ৩৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখার দক্ষিণাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
উত্তর কোরিয়া ছিল শিল্পপ্রধান এবং দক্ষিণ কোরিয়া ছিল কৃষিপ্রধান। কোরিয়ার সামগ্রিক উন্নতির জন্য উভয় কোরিয়ার ঐক্য অপরিহার্য হলেও রুশ-মার্কিন সম্পর্কের অবনতির কারণে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ায় দুটি পৃথক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর কোরিয়ায় রুশ আধিপত্য এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন আধিপত্য
যুদ্ধের সূচনা : দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন একাধিপত্য সোভিয়েত রাশিয়া মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে রুশ মদতে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করে এবং দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
যুদ্ধের অবসান : অসংখ্য বৈঠক ও দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই উত্তর কোরিয়ার রাজধানীতে মার্কিন-চিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়। এইভাবে কোরীয় যুদ্ধের অবসান ঘটে।
কোরীয় যুদ্ধের ফলাফল ও তাৎপর্য
আপাত দৃষ্টিতে কোরিয়ার যুদ্ধ ছিল একটি নিরর্থক যুদ্ধ মনে হলেও বাস্তবক্ষেত্রে এই যুদ্ধের ফলাফল ও তাৎপর্য ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ
(১) কোরিয়ার বিভাজন : উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যকে এই যুদ্ধ পূরণ করতে পারেনি। উপরন্তু উভয় দেশের মধ্যে প্রবল সন্দেহ দেখা দেয়।
(২) সীমানা নির্ধারণ : ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা বরাবর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রসীমা নির্ধারিত হয়।
(৩) স্থায়ী বিভাজন : দুই কোরিয়ার বিভাজন মোটামুটি স্থায়ী ঘটনা বলে বিবেচিত হয় এই যুদ্ধের ফলে।
(৪) মানবিক ও আর্থিক ক্ষতি : দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধে দুই কোরিয়ার বহু সেনা ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। অনেকে গৃহহীন হয়। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দুই কোরিয়ার অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।
(৫) এশিয়ায় ঠান্ডা লড়াইয়ের বিস্তৃতি : আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যেকার ঠান্ডা লড়াই ইউরোপীয় ভূখণ্ড অতক্রম করে কোরীয় যুদ্ধের মাধ্যমে এশিয়াতেও সম্প্রসারিত হয়। সেইসঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চিন-ও শামিল হয়।
(৬) জাতিপুঞ্জের পক্ষপাতিত্ব : এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জাতিপুঞ্জের সিদ্ধান্তগুলি পর্যালোচনা করলে জাতিপুঞ্জের নিরপেক্ষ চরিত্র ও মর্যাদা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়।
(৭) রুশ-চিন মৈত্রী : আমেরিকা কোরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে চিনকে দুর্বল করার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা ব্যর্থ হয়। উল্টে এই যুদ্ধের দ্বারা মার্কিন-চিন বিরোধ বৃদ্ধি পায় এবং রুশ-চিন সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।
(৮) মার্কিন নীতির পরিবর্তন : কোরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধিতার পরিবর্তে বৃহত্তর সাম্যবাদ-বিরোধী হয়ে ওঠে।
(৯) সামরিক জোট গঠন : কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও এশিয়া মহাদেশে বিভিন্ন সামরিক জোট গঠনে উদ্যোগী হয়। যেমন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ‘আনজাস’ (ANZUS) নামে একটি নিরাপত্তা চুক্তি।