ট্রুম্যান নীতি কী? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?

(উত্তর) ১৯৪৫ খ্রি. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকা ও রুশজোট কেন্দ্রিক যে যুদ্ধের আবহের জন্ম হয়, তা ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমকালীন কয়েকটি সিদ্ধান্ত এই ঠান্ডা লড়াইয়ের আবহে ইন্ধন জুগিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ট্রুম্যান নীতি এবং মার্শাল পরিকল্পনা ঘোষণা।

ট্রুম্যান নীতি

ট্রুম্যান নীতি কী : মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতায় ঘোষিত নীতিসমূহ ‘ট্রুম্যান নীতি’ নামে পরিচিত। এই বক্তৃতায় তিনি বলেন যে,

(ক) বিশ্ব এখন দুটি পরস্পরবিরোধী আদর্শ ও জীবনচর্যায় বিভক্ত – একটি হল মুক্ত গণতান্ত্রিক দুনিয়া, অন্যটি হল সাম্যবাদী দুনিয়া।

(খ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব হল মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করা।

(গ) বিশ্বের যে-কোনো মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কমিউনিস্ট গোষ্ঠী দ্বারা আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত রাষ্ট্রকে আমেরিকা সব ধরনের সহায়তা দান করবে।

মার্শাল পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য

মার্শাল পরিকল্পনা : ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার কয়েক মাস পর মার্কিন পররাষ্ট্র-সচিব জর্জ মার্শাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আর্থিক পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন এবং ‘ইউরোপীয় পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা’ নামে এক কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। মার্শালের নামানুসারে এই কর্মসূচি সাধারণভাবে ‘মার্শাল পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত হয়।

মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য : যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও, আরও কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে আমেরিকা মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, যথা –

  1. অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি : যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয়।
  2. কমিউনিস্টদের অগ্রগতি রোধ : অর্থনৈতিক সংকটের ফলে ইউরোপে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের দ্রুত প্রসার ঘটে। তাই কমিউনিস্টদের অগ্রগতি রুখতে চেয়েছিল আমেরিকা।
  3. আমেরিকা চিন্তা : সাম্যবাদী ভাবাদর্শ ও রুশ আধিপত্যের ক্রমাগত প্রসারের ফলে আমেরিকা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারা চিন্তিত হয় এই ভেবে যে, সাম্যবাদের অগ্রগতি রোধ করতে না পারলে সমগ্র পশ্চিম ইউরোপে শীঘ্রই রুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মার্কিন নিরাপত্তা বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
  4. ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আমেরিকায় মুক্ত অর্থব্যবস্থার প্রসার ঘটে। বিপুল পরিমাণ ঋণদানের মাধ্যমে ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে ওই অঞ্চলে মার্কিন ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটানোও মার্শাল পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
  5. অনুগত রাষ্ট্রজোট তৈরি : ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে অর্থসাহায্যের মাধ্যমে একটি অনুগত রাষ্ট্রজোট গঠন করাও ছিল মার্শাল পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য।
error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত