কোন্‌ পরিস্থিতিতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়েছিল? এর ফলাফল কী হয়েছিল?

(উত্তর) প্রথম অংশ : ভারতের কমিউনিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে “মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা” ঘোষণা করেছিল। ভারতে বামপন্থিদের অগ্রগতি এবং বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণে সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ফলত এই দুই বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিটিশ সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য “মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা”।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পেক্ষাপট

(১) শ্রমিক অসন্তোষ : শ্রমিকদের সঠিক মজুরি দেওয়া, কাজের সময় কমানো, ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা প্রভৃতির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। ফলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে।

(২) হুইটলি কমিশন নিয়োগ : ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘হুইটলি কমিশন’ নিয়োগ করে, যার উদ্দেশ্য দিল শ্রমিক শ্রেণিকে তুষ্ট করা। যদিও শ্রমিকরা এই কমিশন বর্জন করেছিল।

(৩) দুটি বিল প্রণয়ন : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী দুটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার – ‘জন নিরাপত্তা বিল’ এবং ‘শিল্পবিরোধ বিল’। এই দুইটি বিলের দ্বারা শ্রমিকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।

এইরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ৩৩ জন বামপন্থী নেতাকে গ্রেপ্তার করে “মিরাট ষড়মন্ত্র মামলা” দায়ের করে। এই মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেমযোগ্য ছিলেন মুজাফ্‌ফর আহমেদ, পি.সি যোশি, এস.এ. ডাঙ্গে প্রমুখ। এছাড়াও তিনজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা হলেন – বেঞ্জামিন ব্রাডলি, ফিলিপ স্প্র্যাট এবং লেস্টার হাচিনসন।

দ্বিতীয় অংশ : ১৯২৯ খ্রি. থেকে ১৯৩৩ খ্রি. পর্যন্ত এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলেছিল। এই মামলার পরিণতি অতি গুরুত্বপূর্ণ।

মামলার ফলাফল

  1. কারাদন্ড : মামলার রায়ে অধিকাংশ নেতা কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়। মুজাফ্‌ফার আহমেদ, এস.এ. ডাঙ্গে, ফিলিপ স্প্র্যাট এঁদের মধ্যে অন্যতম।
  2. কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ : ১৯৩৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এবং তার সকল শাখাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলত এর প্রভাব শ্রমিক আন্দোলনে পড়ে।
  3. গান্ধিজির ভূমিকা : মহাত্মা গান্ধি এই মামলায় অভিযুক্ত নেতাদের সমর্থন করেন এবং জেলে গিয়ে বন্দি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান।
  4. বামপন্থার প্রসার : এই ঘটনার ফলে বামপন্থী ভাবাদর্শের প্রচার ও প্রসারলাভ আরো সহজতর হয়। এই মামলা তাই ব্রিটিশদের কাছে বুমেরাং হয়ে ফিরে গিয়েছিল।

মূল্যায়ন : পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলাকে “জুডিশিয়াল স্ক্যান্ডাল” বলে অভিহিত করেন। এই মামলা ভারতীয় কামিউনিস্টদের সাময়িকভাবে দমন করলেও তাদের পরিপূর্ণভাবে আটকাতে পারেনি। তাই পরবর্তীকালে বামপন্থী নেতারা শ্রমিক-কৃষকদের নিয়ে গণ-আন্দোলন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত