প্রথম অংশ : ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ-এ জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যে ঐতিহাসিক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়, ইতিহাসে তা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।
লক্ষ্ণৌ চুক্তি
পটভূমি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের সুলতান তথা মুসলিম জগতের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু খলিফার বিরুদ্ধে ব্রিটেনের যুদ্ধ ঘোষণা, যা ভারতীয় মুসলিম সমাজের অসন্তোষের আগুনে ঘৃতাহুতি প্রদান করেছিল। তা ছাড়া এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় মুসলিমদের উপর শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন ভারতীয় মুসলমান জনমানসে দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাই লিগ নেতৃত্ব কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নেয়। অন্যদিকে, কংগ্রেসও মুসলিম লিগের সঙ্গে আপস রফার ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টিতে আগ্রহ দেখায়। এই সন্ধিক্ষণে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক লক্ষ্ণৌ চুক্তি।
চুক্তি স্বাক্ষর : ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে চরমপন্থী নেতা তিলকের উদ্যোগে জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের নেতা জিন্নার মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
শর্তাবলি : চুক্তির শর্তানুসারে,
- কংগ্রেস ও লিগ যুগ্মভাবে সরকারের কাছে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি পেশে সম্মত হয়।
- মুসলিম লিগ কংগ্রেসের ‘স্বরাজ’-এর আদর্শ মেনে নেয়।
- কংগ্রেসও লিগের পৃথক নির্বাচনের দাবি মেনে নেয়।
- কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের মোট সদস্যের ১/৩ অংশ হবে মুসলিম।
লক্ষ্ণৌ চুক্তির গুরুত্ব
- এই চুক্তির দ্বারা দীর্ঘদিনের তিক্ততা ভুলে কংগ্রেস ও লিগ পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয় এবং সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়।
- প্রমাণিত হয় যে, ধর্মীয় পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দুই সম্প্রদায় প্রয়োজনে মিলিত হতে পারে।
- চুক্তি-প্রণেতা রূপে তিলক ও জিন্নার রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
সমালোচনা : ড. বিপানচন্দ্রের মতে, এই চুক্তিতে হিন্দু-মুসলিম দুটি সম্প্রদায়ের পৃথক অস্তিত্ব ও স্বার্থ মেনে নেওয়ায় ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার পথ উন্মুক্ত হয়।
মন্তব্য : নানাবিধ সমালোচনা সত্ত্বেও পরিশেষে বলা যায় যে, এই চুক্তি অন্তত সাময়িককালের জন্য হলেও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়কে যৌথভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অংশীদার করে তুলতে পেরেছিল এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে এই চুক্তির উপর ভর করেই গান্ধিজি ভারতের মাটিতে খিলাফত-অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।