(উত্তর) ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার যে দমনমূলক আইন পাশ করেছিল তা হল ‘রাওলাট আইন’। প্রথম পর্বে ১৯১৮ সালে সিডনি রাওলাট-এর সভাপতিত্বে “সিডিশন কমিশন” বা “রাওলাট কমিশন” গঠন করা হয়। পরে এই রাওলাট কমিশনে রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ “রাওলাট আইন” প্রবর্তিত হয়।
আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য
‘রাওলাট আইন’ চালু করার পিছনে ব্রিটিশ সরকারের বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। নীচে উদ্দেশ্যগুলি আলোচিত হল –
- বিপ্লবী ভাবধারা দমন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সারাদেশে বিপ্লবী কর্মকান্ড মাথাচাড়া দিয়েছিল। এই বিপ্লবী ভাবধারা দমন করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ‘রাওলাট আইন’ চালু করেন।
- সংবাদপত্রের স্বাধীনতাহরণ : ব্রিটিশ-বিরোধী সংবাদপত্রগুলি যাতে স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে না পারে, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হতে ব্রিটিশ সরকারের কঠোর দমনমূলক আইনের প্রয়োজন ছিল।
- বিশেষ শ্রেণিকে খুশি করতে : ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন’ সংস্কারের মাধ্যমে ভারতীয়দের খুশি করার চেষ্টা করলে কিছু কিছু ইংরেজ অসন্তুষ্ট হয়। এই শ্রেণিকে সন্তুষ্ট করতে রাওলাট আইনের পরিকল্পনা করে ব্রিটিশ সরকার।
- প্রতিরক্ষা আইনের বিকল্প : ব্রিটিশ সরকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য প্রতিরক্ষা আইন চালু করেছিল। কিন্তু এই আইনটির মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় নতুন করে অরেকটি দমনমূলক আইন প্রবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে
গান্ধিজির বিরোধিতা
রাওলাট আইনের প্রতিবাদে যখন দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়, তখন গান্ধিজিও কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিক্রিয়া জানান। ব্রিটিশ সরকারকে তিনি ‘শয়তানবাদের প্রবর্তক’ বলে সমালোচনা করেন এবং এই আইনকে ‘শয়তানের আইন’ বলে উল্লেখ করেন।
রাওলাট আইনের নির্মমতা উপলব্ধি করে গান্ধিজি এই আইনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই আইনে “উকিল নেহি, দলিল নেহি, আপিল নেহি।” অর্থাৎ এইধরণের আইন দেশে বলবৎ হলে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এইকারণে গান্ধিজি অচিরেই সিদ্ধান্ত নেন এর বিরোধিতা করার। ‘রাওলাট সত্যাগ্রহে’র মাধ্যমে গান্ধিজি তাঁর আন্দোলন শুরু করেন।
সত্যাগ্রহ আন্দোলন : রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গান্ধিজি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ডাক দিয়েছিলেন। গান্ধিজি ৬ই এপ্রিল ১৯১৯ সারাদেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিলে, তা পালিত হয়। এই ধর্মঘট ছিল প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট।
মূল্যায়ন : রাওলাট আইনের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড’। রাওলাট সত্যাগ্রহ আন্দোলনে পরবর্তীকালে হিংসার প্রবেশ ঘটলে মহাত্মা গান্ধি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। যদিও ব্রিটিশ সরকার এই কুখ্যাত আইন প্রত্যাহার করেনি।