জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই ঘটনার গুরুত্ব আলোচনা করো।

(উত্তর)

ভূমিকা : ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কুখ্যাত “রাওলাট আইন” পাশ হলে সারাদেশে প্রতিবাদের তীব্র ঝড় উঠেছিল। উল্লেখ্য, পাঞ্জাবে এই প্রতিবাদ আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। পাঞ্জাবের এই পরিস্থিতির চূড়ান্ত পরিণতি ঘটেছিল ভয়াবহ ‘জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের’ মধ্য দিয়ে।

পেক্ষাপট

পাঞ্জাবে যে ‘জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড’ (১৩ এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রি.) সংঘটিত হয়েছিল তার পিছনে নানা কারণ বর্তমান ছিল। কারণগুলি নীচে আলোচিত হল –

(১) পাঞ্জাবে অত্যাচারের মাত্রাবৃদ্ধি : পাঞ্জাবের মুখ্য প্রশাসক মাইকেল ও’ ডায়ার ছিলেন ভীষণ অত্যাচারী। জুলুম চালিয়ে পাঞ্জাব থেকে সেনা ও অর্থ সংগ্রহ করা, পাঞ্জাবীদের উপর চরম নির্যাতন প্রভৃতি ঘটনার  কারণে পাঞ্জাবের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

(১) রাওলাট আইন : ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক ‘রাওলাট আইন’ প্রবর্তন করলে দেশবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে ।  এই ক্ষোভ পাঞ্জাবে  অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। 

(৩) বিভিন্ন নেতাদের গ্রেপ্তার : রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জারে ক্রমশ আন্দোলন সংগঠিত হতে শুরু করে। ইত্যবসরে অমৃতসরের দুই নেতা সৈফুদ্দিন কিচলু এবং ড. সত্যপালকে গ্রেপ্তার করা হলে জনতা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

(৪) সামরিক শাসন জারি : অমৃতসরের পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে গেলে জেনারেল মাইকেল ও’ ডায়ারের হাতে অমৃতসরের শাসনভার তুলে দেওয়া হয়। তিনি সামরিক আইন জারি করে জনসভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করেন।

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড

পাঞ্জাবে সৃষ্টি হওয়া অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির প্রতিবাদে প্রায় দশ হাজার নিরস্ত্র মানুষ ১৯১৯ খ্রি. ১৩ই এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে সমবেত হয়। সেই সময় জেনারেল মাইকেল ও’ ডায়ার-এর নির্দেশে নিরস্ত্র জনতার উপর দিয়ে গুলি চালানো হয়। মায়দানট উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকায় পালানোর কোনো উপায় ছিল না। শিশু-নারীসহ একহাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। এই জঘন্যতম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে “জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড” নামে পরিচিত।

গুরুত্ব ও প্রতিক্রিয়া

জালিয়ানওয়ালাবাগের ভয়ানক ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোটাবিশ্ব শিহরিত হয়। দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

(১) ক্ষোভ : এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে দেশের সবত্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই হত্যাকান্তের ঘটনা সকল ভারতবাসীর হৃদয়কে আন্দোলিত করেছিল।

(২) উপাধি বর্জন : এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নাইট উপাধি’ (Knight) ত্যাগ করেন। মহাত্মা গান্ধি তাঁর ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ উপাধিও ত্যাগ করেছিলেন। এঁদের উপাধি ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জনতা উৎসাহিত হয়েছিল।

(৩) কংগ্রেসের প্রতিবাদ : জাতীয় কংগ্রেস এই হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সি.এফ. এন্ড্রুজ এই ঘটনাকে “কসাইখানার গণহত্যা” বলে নিন্দা করেছেন। গান্ধিজি লিখেছেন, “This satanic government cannot be mended, it must be ended”.

(৪) ইংরেজদের প্রতিবাদ : এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে অনেক ইংরেজ বুদ্ধিজীবী ভালো চোখে দেখেনি। চার্চিল এই হত্যাকান্ডের ঘটনাকে বলেছেন, ‘পাশবিক ও অস্বাভাবিক’।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত