‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কে? বন্দিনীকে মুক্ত করার যে আকুতি কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে, তা উল্লেখ কর।

(উত্তর)

দ্বীপান্তরের বন্দিনী : বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম প্রণীত ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। এখানে ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ হলেন আমাদের ভারতমাতা। কবি নজরুল তাঁকে ‘ভারত-ভারতী’ বলেছেন।

কবির আকুতি

‘বিদ্রোহী’ নজরুল দেখেছিলেন যাঁরা সত্য কথা বলেছেন, সাম্যের কথা শুনিয়েছেন, আদর্শের কথা বলেছেন- তাঁদের পুরষ্কৃত করা হয়নি। বরং চরম অবমাননা এবং অপমান সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি তাঁদেরকে রাজবিদ্রোহী রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতমাতার কত সন্তানকে আন্দামানের অন্ধকার দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই।

আমাদের সাধের ভারত যেন লঙ্কাপুরীতে পরিণত হয়েছে। ইংরেজরা আমাদের দেশকে যক্ষপুরীর ধন প্রাপ্তির নিশানা রূপেই দেখেছিল। এই কবিতায় দেখা যায়, স্বদেশের দুর্দশা দেখে কবি চিত্তে গভীর বেদনাবোধ সঞ্চারিত হয়েছে। তিনি দেখেছেন, কামানগোলার বর্ষণে সত্যের পূজারিরা হারিয়ে গিয়েছেন মৃত্যুপুরীতে। যাঁরা দেশের বীর ছেলে, দেশের যাঁরা রক্ষী তাঁদের দ্বীপান্তরে বন্দি রাখা হয়েছে।

বাণীর মুক্ত শতদলের মতো যাঁরা সত্যের পূজারী, তাঁরাই বিদ্রোহী বলে চিহ্নিত হন। মহাভারতের মহাযুদ্ধে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্যে শ্রীকৃষ্ণ পুরুষোত্তম পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজিয়েছিলেন, তেমনটি চেয়েছিলেন নজরুল। এভাবে কবি ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় রূপকথার পাশাপাশি ভারতীয় পুরাণের নানা প্রসঙ্গ এনে সত্যের অতন্দ্র প্রহরীকেই আহ্বান করেছেন এই কবিতায়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত