‘তারা ভয়ঙ্কর সজাগ আছে।’ -কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের এমন সজাগ থাকার কারণ কী?

(উত্তর) বক্তব্যের লক্ষ্য : ‘কর্তার ভূত’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। ভূততন্ত্রে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষ বিশ্বাস করেনি। তারা অত্যন্ত সচেতন। তারা যুক্তিবাদী। এখানে তাদের কথা বলা হয়েছে।

সজাগ থাকার কারণ : গল্পের তৃতীয় অনুচ্ছেদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে কারও মনে দ্বিধা জাগত না।’ যার ভূত শাসন তন্ত্রে আস্থা রাখে, তারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারা ভীত মানুষ। তাদের ভবিষ্যৎ লেখকের ভাষা অনুসারে ‘পোষা ভেড়ার মতো।’ সে ভবিষ্যৎ উদ্দেশহীন, নিরর্থক। ফলে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের থেকে তারা বঞ্চিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘কর্তার ভূত’ লেখেন ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন ব্রিটিশ সরকারের চাতুর্যে স্বাযত্তশাসনের স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছিল। দেশের অধিকাংশ মানুষ ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ বিষয়টিকে মেনে নিয়েছিলেন। তাদের মাথার উপরে ধর্মীয় নেতা, রাজনীতির নেতা, ব্রিটিশ সরকার- প্রত্যেকেই প্রভাব বিস্তার করত। অথচ তারা প্রতিবাদ করতেন না। ভাবতেন, কর্তা যখন রয়েছেন তখন কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতে বিশ্বাসী মানুষদের ভুল ভাঙাতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কেননা, তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশ আছে যারা ভূতগ্রস্ত নয়। অথচ সেখানে দিব্য উন্নতির ঘোড়া দৌড়ে চলেছে। তারা অতীতের ভূতে বিশ্বাস করে না। ফলে তাদের সেই রথচক্র সচল বেগে চলেছে। লেখকের ভাষায় ‘মানুষ সেখানে একেবারে জুড়িয়ে যায় নি।’

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত