(উত্তর) প্রসঙ্গ : ‘লিপিকা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘কর্তার ভূত’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। ভূতগ্রস্ত মানুষের মধ্যে যদি কেউ কখনও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, তাহলে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। জেলখানার মধ্যে মানুষের অবস্থা কী দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, সেই আলোচনায় এই উক্তি করা হয়েছে।
উক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ : ‘কর্তার ভূত’ গল্পে গভীর সমাজ বাস্তবতা ধরা পড়েছে। রূপকের অন্তরালে রবীন্দ্রনাথ তৎকালীন সমাজ জীবনের কথা উপস্থাপন করেছেন। ভারতে ইংরেজ শাসনাধীনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি দেশের মানুষ। বরং অন্ধআনুগত্যে সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
‘কর্তার ভূত’ আসলে কর্তার অদৃশ্য শক্তির প্রতি সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলিত রূপ। ভূত- শাসনতন্ত্রের মানুষ অন্ধ আনুগত্যে সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়। কোনোরকম প্রশ্ন চিহ্ন, কোনো প্রতিবাদ এই ভূত- শাসনতন্ত্রের কাম্য নয়।
ফলে ‘ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে কারো মনে দ্বিধা জাগত না।’ ভূতের রাজ্যজুড়ে চলত সবাইকে অচেতন কের রাখবার গান- ‘খোকা ঘুমোলো, পাড়া জুড়োলো’। কিন্তু গান শেষ না হতেই এই নিশ্চিন্ত আরামের বিষয়টি আর থাকে না, কেননা ততক্ষণে দেখা যায় সংকট- ‘বর্গি এলো দেশে’।
সঙ্গতই যারা নবীনপন্থী তারা প্রশ্ন করে ‘খাজনা দেব কিসে’। তারা সচেতন বলেই ভূতের নায়েব তাদের ধমকায়। কেননা, আনুগত্যই এখানে শেষকথা। এভাবে প্রতিবাদী কণ্ঠ হারিয়ে যায় ভূত-শাসনতন্ত্রের যান্ত্রিকতায়।