‘হাহা ক’রে তার উত্তর আসে, “আব্রু দিয়ে, ইজ্জত দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে।” – কোন্ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য? মন্তব্যটির গভীর নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

(উত্তর) প্রসঙ্গ : সচেতন গদ্যশিল্পী রবীন্দ্রনাথের ‘কর্তার ভূত’ গল্পে ঘুমন্ত ভূত-শাসনতন্ত্রে বুলবুলিরা এসে বেবাক ধান খেয়ে গিয়েছিল। ঠিক এর পরেই অন্য আর একটি সংকট দেখা গিয়েছিল, তা হলো- ‘বর্গি এলো দেশে’। খাজনা কীভাবেই বা মেটানো হবে সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।

মন্তব্যটির নিহিত অর্থ : অধ্যাপক তপোব্রত ঘোষ লিখেছেন, ‘মঙ্গলকারী বাস্তুভূতের লোকপ্রচলিত সংস্কারকে ভেঙে এই ছোটোগল্পটি তৈরি হয়েছে।’ (রবীন্দ্র-ছোটগল্পের শিল্পরূপ) ‘কর্তার ভূত’ গল্পটির মধ্যে অসাধারণ একটি রূপক আছে।

‘কর্তা’ আসলে ক্ষমতার অধিকারী ‘উচ্চবর্গ’ আর সেখানে কর্তার অধীনস্ত বা অন্ধ আনুগত্যকারী মানুষরা হলেন ‘সাব-অলটার্ন’ বা ‘নিম্নবর্গ’। কর্তা মৃত্যুর পরেও আধিপত্য বিস্তার করেন, কর্তৃত্ব আরোপ করেন। আর তার শাসনে একসময় দু’দিক থেকে দেশের মানুষ শোষিত হয়। কর্তার নায়েবকে যেমন অর্থ দিতে হয়, তেমনই বাইরে থেকে আসা বর্গির দলকেও খাজনা দিতে হয়।

ব্রিটিশ শাসনে জমিদার তন্ত্র ও বিদেশি শাসকদের অর্থ জোগাতে গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষরা সর্বস্ব খুইয়েছিলেন। এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে সঙ্গতই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে ‘খাজনা দেব কিসে’। ভূত-শাসনতন্ত্রে যারা আত্মনির্ভরশীল হতে চেয়েছিল তারাই এই প্রশ্ন রেখেছিল। আর তার উত্তর এসেছিল এই অপরিমেয় ঋণভার, এই খাজনা, এই দায়ভার তাদের পরিশোধ করতে হবে আব্রু দিয়ে, ইজ্জত দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে। অর্থাৎ কর্তার ভূত যাদের ঘাড়ে তারা জানে যেকোনো বিনিময়ে এই খাজনা দেওয়া বাধ্যতামূলক। আর এভাবেই তারা ভূতের রাজত্বে ভূত ও অভূতের পেয়াদাদের চক্রান্তে প্রায়ই আক্রান্ত হয়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত