‘ওরে অবোধ, আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া’ – কোন্ রচনার অংশ? এখানে কে, কাদের ‘অবোধ’ বলেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

(উত্তর) উৎস : উদ্ধৃত এই বাক্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘লিপিকা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘কর্তার ভূত’ নামাঙ্কিত গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গ : নির্বাচিত এই মন্তব্যে দেশের মধ্যে দুটো-একটা মানুষ, যারা দিনের বেলা নায়েবের ভয়ে কথা বলে না, তারা গভীর রাতে কর্তার কাছে যখন প্রশ্ন করেছিল, ‘কর্তা, এখনো কি ছাড়বার সময় হয়নি।’ তখন তাদের উদ্দেশ্যে কর্তা এই উক্তি করেছিলেন।

উক্তিটির তাৎপর্য : ‘কর্তার ভূত’ গল্পের মধ্যে ‘ভূত’ শব্দটির বিশেষ একটি তাৎপর্য রয়েছে। যথা- ক) ভূত খ) বর্তমান গ) ভবিষ্যৎ। 

‘কর্তার ভূত’ গল্পে বর্তমান সময়ে অবস্থান করে দেশ-সুদ্ধ মানুষ অতীতে অর্থাৎ ভূত অবস্থার প্রতি অধিক আকর্ষণ বোধ করেছিল। অর্থাৎ বর্তমানে থেকে তারা ভবিষ্যতের দিকে না চলে ক্রমাগত পিছনের দিকে হেঁটেছিল। ‘ভূত’ শব্দটির প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে তাই বিশেষ এক তাৎপর্য। যারা ভবিষ্যৎকে মানতে ভয় পায়, যারা কোনোভাবেই আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হতে চায় না। তারাই ভূতকে মানে। রবীন্দ্রনাথ এজন্যে লিখেছেন – “ভবিষ্যৎকে মানলেই তার জন্যে যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোনো ভাবনাই নেই; সকল ভাবনা ভূতের মাথায় চাপে।” অথচ ভূতের কোনো মাথা নেই। সুতরাং, ‘কারও জন্যে তার মাথাব্যথাও নেই।’ তবু দেশসুদ্ধ লোক খুশি থাকে এইভেবে যে, মাথার উপরে কর্তা রয়েছেন। ফলে তারা ভালোই থাকবে।

ভূতের দেশে মাঝে মাঝেই নানা প্রশ্ন ওঠে। ভূতের বাধ্য পেয়াদারা খাজনা দাবি করে। নানা দিক থেকে চতুর বুলবুলিরা ধান খেয়ে যায়। তত্ত্বজ্ঞানীরা অবশ্য বলেন – “এটা ভূতের দোষ নয়, ভুতুড়ে দেশের দোষ নয়, এক মাত্র বর্গিরই দোষ। বর্গি আসে কেন।” কিন্তু কতদিন কর্তার এই শাসন চলবে। কয়েকজন এ প্রশ্ন কর্তার কাছে করলে কর্তা বিস্মিত হন। কেননা, তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কাউকে ধরে বা ছেড়ে নেই। সুতরাং তাঁর বক্তব্য- ‘তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।’ এভাবে উক্তিটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত