“তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে”—কার সঙ্গে এই ব্যবধান? একত্রে থেকেও এই ব্যবধানের তাৎপর্য কী?

(উত্তর) প্রথম অংশ—সাধক কবি লালন রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ শীর্ষক গানে লালন জানিয়েছেন, পড়শি তথা মনের মানুষের সঙ্গে তাঁর ব্যবধান রয়েছে।

দ্বিতীয় অংশ—বাউল সাধকেরা মনের মানুষের সন্ধানে সাধনা করে থাকেন। সেই অধরা মনের মানুষ সাধকের কাছেই থাকেন। কিন্তু সাধক তাঁকে চিনতে পারেন না। লালন বলেছেন, তাঁর পড়শি আরশিনগরে বাস করেন। তা সত্ত্বেও ‘একদিনও না দেখিলাম তারে’।

          লালনের সঙ্গে পড়শির গভীর সম্পর্ক। কিন্তু লালনের আক্ষেপ পড়শির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়নি। কেননা উভয়ের মধ্য রয়েছে ‘অগাধ পানি’। ফলে মনের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও লালন পড়শির কাছে পৌঁছাতে পারেননা—“আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে”।

          লালন যে পড়শির কথা আমাদের শুনিয়েছেন তিনি নিরাকার। তাঁর হাত-পা-মাথা কিছুই নেই। নিজেকে না জানলে এই পড়শিকে ভালোভাবে জানা যায় না।

          আমাদের আলোচ্য গানটিতে পড়শির সঙ্গে মিলনের জন্য সাধকের মনের অস্থিরতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই লালন বলেছেন, পড়শির কাছেই তিনি রয়েছেন অথচ পড়শিকে তিনি চিনতে পারেন নি। তাই উভয়ের মধ্যে রয়েছে লক্ষ যোজন ফাঁক। এই বক্তব্যের মধ্যে সাধকের অস্থির হৃদয় যন্ত্রণা প্রকাশিত হয়েছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত