‘পড়শি যদি আমায় ছুঁত/ আমার যম-যাতনা যেত দূরে”—পড়শি কে? যম-যাতনা কথার অর্থ কী? কীভাবে যম-যাতনা দূরে যেত বলে কবি মনে করেন?

(উত্তর) পড়শি—সাধক লালন ফকিরের কাছে পড়শি হলেন তাঁর উপাস্য ঈশ্বর বা ‘মনের মানুষ’। ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ গানটিতে এই মনের মানুষের স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে।

যম-যাতনা—‘যম-যাতনা’ কথার অর্থ হলো মৃত্য-যন্ত্রনা বা মৃত্যু-ভয়।

যম-যাতনা কীভাবে দূর হতো—লালনের গানের মধ্যে আত্মনিবেদনের সুর অত্যন্ত প্রবল। আলোচ্য গানটিতে লালন তাঁর অধরা ‘সাধনার ধন’কে অন্বেষণ করেছেন। এই পড়শি হলেন মুক্তি পথের অগ্রদূত। তিনি আরশিনগরে থাকেন। অথচ লালন তাঁকে দেখতে পাননা—

‘আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’।

          পড়শি ও কবির মধ্যে রয়েছে দূরত্বের সম্পর্ক, মাঝে রয়েছে ‘অগাধ পানি’। অর্থাৎ যাকে পাওয়া যায় না তাঁকে পাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা এখানে পরিস্ফুটিত হয়েছে।

          পড়শির কৃপা ছাড়া লালনের জীবন বৃথা। পড়শি কখনো শূন্যে অবস্থান করেন আবার কখনো ভাসেন জলে। অর্থাৎ দিব্য চোখে ছাড়া তাঁকে উপলব্ধি করা যায় না।

          লালন বিশ্বাস করেন পড়শি তাঁকে যদি একবার স্পর্শ করেন তাহলে তাঁর ‘যম-যাতনা’ দূরে চলে যেত। পড়শির উপলব্ধি হলো চরম উপলব্ধি। তখন যম-যাতনা অর্থাৎ মৃত্যু-ভয় লালনকে স্পর্শ করতে পারবে না। পড়শির অপার মহিমায় লালন মুগ্ধ হবেন।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত