‘বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করি?’–কোন্ কবির কোন্ কবিতার অংশ? উদ্ধৃত পংক্তিটিতে ‘বাপব্যাটা দু-ভাই’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন? বক্তা কেন সারা পাড়া মাথায় করেন ?

উৎস :

প্রশ্নে ব্যবহৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতার অংশ।

বাপ-ব্যাটা :

উদ্ধৃত পংক্তিতে ‘আমরা’ বলতে বাবা-ছেলেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কবিতায় এরাই ‘বাপ-ব্যাটা’ নামে পরিচিত হয়েছে। ‘বাপব্যাটা দু-ভাই’ এটি একটি প্রবাদ। আঞ্চলিক ভাষায় এই প্রবাদটির প্রচলন রয়েছে। তবে প্রসারিত অর্থে ‘আমরা’ বলতে সমাজের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটানো শ্রমজীবী মানুষের কথা বলা হয়েছে।

সারা পাড়া মাথায় করার কারণ :

কবিতার শুরুতে ‘আমরা’ শব্দে নামাঙ্কিত কথক জানিয়েছে তারা ‘অল্পে খুশি’। তারা দুঃখ করে অনর্থক মন খারাপ করতে চায় না। বরং ‘সাধারণ ভাতকাপড়ে’ আর ‘অসুখে ধারদেনাতে’ তাদের দিন কেটে যায়। সবদিন অর্থের অভাবে বাজার করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু যেদিন তাদের অর্থাভাব থাকে না, সেদিন ‘মাত্রাছাড়া’ বাজার করে খুশি হয়। আর সেই খুশিতেই বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনে ‘গোলাপচারা’।

কথক বলেছে, ‘আমরা তো এতেই খুশি’। কেননা, হেসে খেলে, কষ্ট করে তাদের দিন চলে যায়। মাঝে মাঝে অবশ্য চলে না দিন। প্রায়ই মধ্যরাতে বাপ-ব্যাটা বাড়ি ফিরে যখন খেতে বসে তখন দেখে ‘নুন নেই ঠান্ডা ভাতে”। সামান্য নুনটুকুও জুটবে না তাদের খাওয়ার পাতে? তারই প্রতিক্রিয়ায় আমরা দেখি—

‘রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি

বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করি’।

কবি সংবেদনশীল বলেই প্রার্থনা করেন—‘শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক’। এটুকুতেই হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ ভুলে থাকার রসদ পাওয়া যায়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত