‘নুন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।

নামকরণ : সরাসরি বিষয়ভাবনার মধ্যে প্রবেশ করে কবি জয় গোস্বামী ‘নুন’ কবিতার নামকরণকে করেছেন একটি বিশেষ সময়ের বঞ্চিত শ্রেণির পরিচায়ক।

এক। জীবন-সংগ্রামের নেপথ্য ভূমিকা

কবিতার শুরুতেই সমকালীন বঞ্চিত শোষিত শ্রেণির মানুষের মানসিক অবস্থা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাদের নিরন্তর সংগ্রামকে তুলে ধরার জন্যেই জয় গোস্বামী প্রথমেই বলে নিয়েছেন–‘আমরা তো অল্পে খুশি’।

দুই৷ বঞ্চনার শত ইতিহাস

দীন-দরিদ্র মানুষ বিলাসিতা করতে পারে না। শুকনো ভাতে সামান্য লবণটুকুই তাদের একমাত্র প্রত্যাশা। ভাত-কাপড়ে সাধারণভাবে দিন চলে গেলেই তো তারা খুশি।

তিন। সাধের স্বপ্ন

সবদিন যাদের বাজার করা সাধ্যের অতীত হয়ে দাঁড়িয়েছিল; তাদের মনে তখন শেষ প্রদীপের আলোর মতো টিকে ছিল সাধের স্বপ্নটুকু। আর এজন্যে বাড়িতে ফেরার পথে গোলাপচারা কিনে আনত।

চার। প্রবল সংশয়

‘গোলাপচারা’ এখানে সময়ের সংকট থেকে বেরিয়ে প্রতীকে পরিণত হয়। তাছাড়া এই সংশয় মনে জায়গা করে নেয়—‘ফুল কি হবেই তাতে?’ এসব কথার সঙ্গত উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না যখন, ঠিক তখনই ‘বাপব্যাটা দু-ভাই’ মিলে টান দেয় গঞ্জিকাতে।

পাঁচ। বেঁচে থাকার প্রত্যাশা

গঞ্জিকা যেন এখানে সব যন্ত্রণা ভুলে থাকার অব্যর্থ নিশানা। ফলে ‘আমরা’ নামে চিহ্নিত সময়ের মানুষজন শুধুমাত্র নুনের প্রত্যাশায় বসে থাকে। বেঁচে থাকা যখন একমাত্র আকাঙ্ক্ষা তখন ঠান্ডা ভাতের জন্যে শুধু নুনটুকুই তো যথেষ্ট।

ছয়। একমাত্র প্রত্যাশা

ঠান্ডা ভাতে নুনের দাবি জানানোর মধ্যে কোনো বিলাসিতা নেই। সামান্য লোক হলেও অতিসামান্য নুনটুকু কেন শুকনো ভাতে জোটে না। তাই এই দাবি জানিয়ে কবিতা শেষ হয়—‘আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক’।

এখানে এই ‘লবণের ব্যবস্থা’ নিম্নবিত্ত পরিবারের কাছে একমাত্র প্রত্যাশা। আর এই প্রত্যাশাটুকু মিথ্যা নয়। এদিক থেকে ‘নুন’ কবিতাটি বিশেষ তাৎপর্যে যথাযথ সুচিন্তিত নামকরণের মর্যাদা পায়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত