‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কাব্যাংশে নীলধ্বজের প্রতি জনার যে ক্ষোভ ও অভিমান প্রকাশিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

[উ] জনার ক্রুদ্ধ অভিমানী স্বর

মহাভারতের ‘অশ্বমেধ পর্ব’ থেকে নীলধ্বজ ও তার পুত্র প্রবীরের কাহিনি সংগ্রহ করে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্র কবিতাটি রচনা করেছেন।

জনা চরিত্রটি মূল মহাভারতে নেই। জনার কাহিনি পাওয়া যায় কাশীরাম দাসের বাংলা মহাভারতে। সেখান থেকে জনা চরিত্রটি গ্রহণ করে অশ্বমেধ পর্বের সঙ্গে চরিত্রটিকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। উনিশ শতকীয় নারী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে জনার মাধ্যমে।

মাহেশ্বরী-পুরীর যুবরাজ প্রবীর অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্বটিকে আটক করেছিলেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে অর্জুন প্রবীরকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু পিতা হয়ে রাজা নীলধ্বজ অর্জুনের এই অন্যায়কর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে সন্ধি স্থাপন করেছিলেন। প্রবীরের মৃত্যুতে নীলধ্বজ উদাসীন হলেও জনার হৃদয় শোক-সন্তাপে বিদীর্ণ হয়েছিল।

স্বামী নীলধ্বজের আচরণে প্রথমে বিস্মিত এবং পরে বিক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন জনা। একদিকে কাপুরুষ স্বামীকে তিরস্কার, অন্যদিকে পুত্র-ঘাতক পাণ্ডবদের প্রতি মর্মান্তিক ব্যঙ্গ এবং সেই সঙ্গে বীরপুত্রের জন্যে মায়ের মর্মভেদী বিলাপ জনা চরিত্রকে স্বাতন্ত্র্য করেছে।

স্বামীর কাপুরুষোচিত ব্যবহারে ক্ষত্রিয়-কন্যা জনা ক্রুদ্ধ হয়ে চিঠিতে লিখেছেন—

“তব সিংহাসনে

বসিছে পুত্রহা রিপু—মিত্রোত্তম এবে!

সেবিছ যতনে তুমি অতিথি-রতনে”।—

নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায় জনার ক্রুদ্ধ অভিমানী স্বর এভাবে উচ্চকিত থেকেছে।

জনা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেই জানিয়েছেন—

“কিন্তু বৃথা এ গঞ্জনা। গুরুজন তুমি;

পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তোমারে”।

এভাবে জনার মধ্যে অভিমানবোধ, ক্ষোভ ও মর্মপীড়া লক্ষণীয়।     

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত