কৌরববংশের বিরুদ্ধে জনার অভিযোগগুলি সংক্ষেপে লেখো।

[উ] নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্রকাব্যে পৌরাণিক জনা চরিত্রটিকে কবি শ্রীমধুসূদন নবরূপ দান করেছেন। একমাত্র পুত্র প্রবীরকে হারিয়েছেন জনা। অথচ মাহেশ্বরপুরী-রাজ নীলধ্বজ পুত্রশোকে বিহ্বল নন। বরং অর্জুন ও কৃষ্ণকে নিয়েই তিনি ব্যস্ত। বিরক্ত, অসহায়া জনা তার সমস্ত ক্ষোভ-বিদ্বেষ উগরে দিয়েছেন পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে।

কৌরববংশের বিরুদ্ধে জনার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। প্রথমেই তার অভিযোগ পার্থের বিরুদ্ধে। জনার মনে হয়েছে, কর্ণ ও পিতামহ ভীষ্মকে অন্যায় সমরে নিধনকারী অর্জুন কখনও ক্ষত্রপতি বীরশ্রেষ্ঠ নয়। তাঁকে ‘নরনারায়ণ জ্ঞানে’ পূজা করা অর্থহীন। জনা একই সঙ্গে জানিয়েছেন খাণ্ডব দহন করার মধ্যে অর্জুনের কোনো একক কৃতিত্ব নেই। উপরন্তু যে আচার্য তাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তাকেও ছলনায় হত্যা করেছে। জনার মন্তব্য—

“দ্রোণাচার্য গুরু—

কি কুছলে নরাধম বধিল তাঁহারে,”

অর্জুনের বীরত্বে জনার কোনও বিশ্বাসও নেই। প্রশ্ন তুলেছেন যুদ্ধের রীতি নিয়ে—

“কহ মোরে শুনি,

মহারথী-প্রথা কি হে এই, মহারথি?”

কুন্তীকে জনা চিহ্নিত করেছে ‘স্বৈরিণী’ রূপে। আর তার পুত্রবধূ দ্রৌপদীকে চিহ্নিত করেছেন ‘পৌরব-সরসে নলিনী’ রূপে। দ্বৈপায়ন ঋষি ব্যাস কীভাবেই বা ভ্রাতৃবধূদ্বয়ের সন্তানের জনক হয়েছিলেন; সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে জনা।

কৌরবদের প্রতিটি ঘটনা জনার চোখে লজ্জাকর, হীনকর বলেই মনে হয়েছে। জনা প্রশ্ন করেছে, কুলটা নারী কুন্তীর সন্তান ছিল অর্জুন। মধুসূদন চেয়েছিলেন, ভারতীয় পুরাণকে নতুন আলোক-সম্পাতে উপস্থাপন করতে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত