[উ] ১) বীরাঙ্গনা–‘বীরাঙ্গনা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষত্রিয় তেজে উদীপ্ত রমণী।
২) জনা কী প্রকৃতই বীরাঙ্গনা—কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যের ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতার মধ্যে জনার তেজস্বিনী, বীরাঙ্গনা মূর্তিটি অঙ্কিত হয়েছে। জনার নামে নামাঙ্কিত এই পত্রিকাটিতে জনার তেজ, ক্ষোভ এবং অসহায় হৃদয়ের কথা ব্যক্ত হয়েছে। এখানে বীরপুত্র প্রবীরের মৃত্যুকে জনা গর্বের সঙ্গে দেখেছেন। স্বামীকে তিনি বারবার উদ্দীপ্ত করেছেন অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রায়। তিনি রণসাজে সজ্জিত হওয়ার আহ্বান করেছেন নীলধ্বজকে।
নগরীতে উৎসবের আয়োজনের কারণ জানতে চেয়েছেন। প্রথমেই তিনি স্বামীকে সরাসরি অভিযোগ করেননি। তার মধ্যে কুণ্ঠা ছিল, সেই কুণ্ঠা থেকে জানতে চেয়েছেন—
“সাজিছ কি নররাজ যুঝিতে সদলে—
প্রবীর পুত্রের মৃত্যু প্রতিবিধিৎসিতে,
নিবাইতে এ শোকাগ্নি ফাল্গুনির লোহে?”
বীরপুত্র যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে। তার মৃত্যুর কারণ অর্জুন। সুতরাং জনা চেয়েছেন নীলধ্বজ যেন অর্জুনকে যথোচিত শাস্তি দেন। কিন্তু যখন শুনেছেন তাঁর স্বামী অর্জুনকেই সাদরে বরণ করতে চলেছেন তখন জনার ক্ষোভ-দুঃখ তীব্র মাত্রা পেয়েছে।
তিনি সমস্ত পাণ্ডব পক্ষের দুর্বলতার দিকগুলি স্বামীর সামনে তুলে ধরেছেন এবং অর্জুন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, অর্জুন হলেন মহাপাতকী। কেননা, খাণ্ডব-দাহনে কৃষ্ণের সহায়তা, কুরুক্ষেত্রে-যুদ্ধে ভীষ্ম নিধনে শিখণ্ডীর সাহায্য লাভ, ছলনার আশ্রয়ে দ্রোণাচার্যের হত্যা সাধন, অন্যায় সমরে কর্ণ-হত্যা— এসবই অর্জুনের কু-কর্মের দৃষ্টান্ত।
স্বামী যখন নিতান্তই অবোধ বালকের মতো অর্জুনের পদলেহনের জন্যে উৎসাহিত হয়ে পড়েছেন, তখন শোকে দুঃখে হতাশায় জনা মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন—
“ছাড়িব এ পোড়া প্রাণ জাহ্নবীর জলে;”
‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যে জনা চরিত্রে মাতৃ-হৃদয়ের অপূর্ব স্নেহের ধারা এবং তার স্নেহ-বাৎসল্যের সঙ্গে বীরাঙ্গনা মূর্তিটির যথাযথ প্রকাশ ঘটেছে।