[উ] সূচনা—মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যের ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্র-কবিতায় অর্জুন চরিত্রটি প্রত্যক্ষভাবে নেই। মাহেশ্বরপুরীর রানি জনার দৃষ্টিতে তৃতীয় পান্ডব অর্থাৎ অর্জুনকে পাঠক প্রত্যক্ষ করেন।
অর্জুনের কাপুরুষতা
রাজমাতা জনা চেয়েছিলেন, রাজা নীলধ্বজ নিশ্চয়ই পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নেবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, নীলধ্বজ অর্জুনের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপন করেছেন। তাই জনা ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত।
জনা স্বামীকে বোঝাতে চাইছেন যে, অর্জুনের একক কৃতিত্ব বলে কিছু নেই; সবই ছলাকলা ও কৃষ্ণের সহায়তা। তাই জনা কখনো ‘মহাপাপী’ কখনো ‘নরাধম’ আবার কখনো ‘বর্বর’ বলে তিরস্কার করেছেন।
অর্জুন ক্ষত্রিয় বীর, মহাযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। অথচ প্রকৃত যোদ্ধার রণকৌশল তিনি অনুসরণ করেননি। অর্জুনের এই কাপুরুষতার একাধিক দৃষ্টান্ত আমরা জনার কাছ থেকে পাই—
১) স্বয়ংবর সভায় দ্রৌপদীকে লাভ করার জন্য ব্রাহ্মণ ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা করেছিলেন।
২) নিজের একক ক্ষমতায় অর্জুন খান্ডব বন দহন করতে সমর্থ হননি। একাজে কৃষ্ণ তাকে সহায়তা করেছিলেন।
৩) শিখণ্ডীর সাহায্য ছাড়া তিনি কিছুতেই পিতামহ ভীষ্মকে বধ করতে পারতেন না।
৪) গুরু দ্রোণাচার্যকে বধ করেছেন কৃষ্ণের প্রত্যক্ষ সহায়তায়।
৫) কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে যায়। সেই রথচক্র উদ্ধারকালে নিরস্ত্র কর্ণকে হত্যা করেন অর্জুন।
এই প্রসঙ্গে অর্জুনের অবৈধ জন্ম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জনা। এইভাবে একাধিক প্রসঙ্গ উত্থাপন করে স্বামী নীলধ্বজকেও উদ্দীপিত করতে চেয়েছেন।