‘হায় পাগলিনী জনা’ – পাঠ্যকবিতা অনুসরণে পাগলিনী জনার চরিত্র বিশ্লেষণ করো। অথবা ‘ক্ষত্র-কুলবালা আমি; ক্ষত্রকুলবধূ– বক্তার এমন মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা কর।

[উ] প্রাক্কথন—কবি মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যের ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্রকবিতার জনা হলো রাজা নীলধ্বজের পত্নী, যিনি যথার্থই বীরাঙ্গনা চরিত্র। তার মধ্যে মাতৃত্ববোধ প্রবল। তিনি ক্ষত্রিয় কুলবালা এবং ক্ষত্রিয় কুলবধূ। এই পত্রকবিতায় জনা চরিত্রের যে স্বরূপ উদ্ভাসিত হয়েছে, তা কতগুলি সূত্রে উপস্থাপন করা যায়।

[] জননীরূপে জনা—জনার একমাত্র অবলম্বন তার পুত্র প্রবীর। জননীর কাছে সবথেকে আকাঙ্ক্ষার জায়গা হলো তার সন্তান। সেই সন্তানকে হারিয়ে জননী জনা নিঃস্ব হয়েছেন। তাই সন্তানহারা মায়ের আক্ষেপ—

“হা পুত্র! শোধিলি কি রে তুই এই রূপে

মাতৃধার?”

[] বীরাঙ্গনা রূপে জনা—পুত্রের মৃত্যুকে জনা গর্ব হিসেবেই দেখেছেন। তিনি বীরাঙ্গনা। স্বামীকে তাই উদ্দীপ্ত করেছেন অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রায়। তিনি রণসাজে সজ্জিত হওয়ার জন্যে প্রার্থনা করেছেন নীলধ্বজকে। জানতে চেয়েছেন—

“সাজিছ কি, নররাজ, যুঝিতে সদলে-

প্রবীর পুত্রের মৃত্যু প্রতিবিধিৎসিতে”

[] প্রতিহিংসাপরায়ণা—পুত্রশোকের আকুলতা জনাকে উন্মাদিনী করে দিয়েছে। তিনি শোকের আগুন ‘ফাল্গুনীর লোহে’ নির্বাপিত করতে চেয়েছেন। পুত্রঘাতীকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য স্বামীর কাছে প্রার্থনা করেছেন—“খণ্ডমুণ্ড তার আন শূলদণ্ড-শিরে”।

[] প্রতিবাদিনী জনা—আলোচ্য পত্রকবিতায় কবি জনাকে প্রতিবাদী হিসাবে অঙ্কন করেছেন। মহান চরিত্র যথা ব্যাস, অর্জুন, কৃষ্ণ প্রত্যেকেই অন্যায় করছেন, তা জানাতে ভোলেনি জনা। কুন্তী ও দ্রৌপদীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করতে জনা দ্বিধাবোধ করেননি।

[] অসহায়া জনা—পাঠ্য কবিতায় জনা চরিত্রটিকে অসহায় রূপে চিহ্নিত করা যায়। শোকাকূলা জনা পুত্রহত্যার প্রতিশোধ নিতে পারেননি। স্বামী নীলধ্বজকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সদর্থে সে অসহায়া। তাই অভিমানিনী জনা জাহ্নবীর জলে আত্মবিসর্জন দিতে চেয়েছেন—“ছাড়িব এ পোড়া প্রাণ জাহ্নবীর জলে”!

মূল্যায়ণ—‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায় জনা মূল চরিত্র। সমগ্র কবিতার ছত্রে ছত্রে জনার বীরাঙ্গনার রূপ ফুটে ওঠে। জনার কটাক্ষ, প্রতিবাদ, প্রতিহিংসা, অভিমান সমস্ত কিছুই তাকে বীর নারীতে পরিণত করেছে। যদিও শেষাংশে নিজেক ব্যর্থ মনে করে আত্মবিসর্জনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত