‘এতক্ষণে বোঝে সৌখী ব্যাপারটা।’—কোন্ ‘ব্যাপারটা’র কথা বলা হয়েছে? সে কীভাবে এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, তা আলোচনা করো।

১) কোন্ ব্যাপার: আধুনিক আর্থসামাজিক বাস্তব ভারতের প্রেক্ষাপটে লেখা সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। দারোগার সামনে চুরির ঘটনা বিষয়ে একটিও বাক্য ব্যয় করার সাহস দেখায়নি। সৌখী বুঝতে পেরেছিল, তার মা যে কর্মটি করেছে, তা নিঃসন্দেহে গর্হিত কর্ম। সেই প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

২) ব্যাপারটি অনুধাবন: সাংসরিক অভাব অনটন যখন চরম পর্যায়ে উঠেছিল তখন পুত্রবধূ ও নাতিকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে মুথাঘাসের মতো কোনোভাবে টিকেছিল সৌখীর মা। ছেলে বাড়ি ফেরায় আনন্দের সঙ্গে বিষাদও সৌখীর মার মন জুড়ে ছিল।

          কী খাওয়াবে ছেলেকে?–সেই চিন্তায় অস্থির সৌখীর মা সারারাত চোখের দুটি পাতা এক করতে পারে না। ছেলের পছন্দের খাবার ছিল আলু চচ্চড়ি। সেই প্রসঙ্গে সতীনাথ লেখেন—

“আলু, চাল, সরষের তেল সবই কিনতে হবে। অত পয়সা পাবে কোথায়?”

এই চিন্তায় অস্থির থেকে সৌখীর মা মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে একটি লোটা চুরি করে।

          ঘটনাচক্রে মাতাদীন সেই লোটা কেনার জন্যে বাসনের দোকানে গিয়ে উপস্থিত হলে গল্পের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। সমস্ত সম্ভ্রমের নিষেধ অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র সন্তানের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখতে সৌখীর মা চৌর্যবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছিল।

          মাতাদীন পেশকারের সঙ্গে দারোগা-পুলিশের গভীর সখ্যতার সম্পর্ক। ফলে তারা একসঙ্গে গিয়ে হাজির হয় সৌখীর বাড়িতে। দারোগাসাহেবের প্রশ্নের জবাবে সৌখীর মা একটি কথাও বলতে পারে না। ধূর্ত ও মতলবী দারোগার সামনে মায়ের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি সম্পর্কে সতীনাথ লেখেন—

“কোনো জবাব বেরুল না বুড়ির মুখ দিয়ে। শুধু একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে সে মাথা হেঁট করে”।

সৌখী এই সত্য অনুধাবন করে যে, তার মা গত রাতে লোটা চুরি করেছে। সে ডাকাত হলেও তার মাকে নিয়ে তার একটি বিশ্বাসের জগৎ, গর্বের জায়গা ছিল— তা কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে খান খান হয়ে যায়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত