১) যার কথা বলা হয়েছে: ‘ডাকাতের মা’ নামাঙ্কিত বহুখ্যাত গল্পের থেকে উদ্ধৃত এই উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। এখানে সৌখীর কথা বলা হয়েছে।
২) প্রসঙ্গ: দীর্ঘদিন কারাবরণের পর সৌখী যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন স্ত্রী ও শিশুপুত্রটিকে না দেখতে পেয়ে তার মনের অবস্থা বর্ণনায় লেখক এই উক্তিটি করেছেন।
৩) ‘আনন্দ অর্ধেক হওয়ার কারণ: সতীনাথ ভাদুড়ীর মধ্যে ছিল সর্বব্যাপী ও সুগভীর অস্তদৃষ্টি। ‘ডাকাতের মা’ নামাঙ্কিত গল্পে এক বিশেষ আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে একজন যুবকের বিপদগামী হওয়ার আখ্যান লিখেছেন সতীনাথ।
জীবনের বেশিরভাগ সময় সে অন্ধকারের মধ্যে দিন যাপন করেছে। সতীনাথ লিখেছেন—
“সৌখী জেলে গিয়েছে আজ পাঁচ বছর; … সৌখীরও তো এর আগে দুবার কয়েদ হয়েছে”।
অর্থাৎ কারাগারে থাকাই যেন তার নিত্য রুটিন।
দীর্ঘদিন পর সৌখী যখন বাড়ি ফিরেছিল তখন পত্নী ও পুত্রকে না দেখে তার বাড়ি ফেরার আনন্দ অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে তার নিজস্ব ভালোলাগার একটি জগৎ। যতই বিপর্যয় আসুক না কেন মানুষ বেঁচে থাকে একটুকরো স্বপ্ন নিয়ে।
ভাগ্যহীন সৌখীর মধ্যেও সেই স্বপ্নটুকু ছিল। ঘটনা চক্রে সে ডাকাত হলেও এবং দারিদ্র্য তাদের পরিবারে নিত্য সহচর হলেও মানবিক বোধবুদ্ধির বিলুপ্তি ঘটেনি। তাই দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে তার দু’চোখ খুঁজতে থাকে অন্তরঙ্গ মানুষজনদের।
সৌখীর মা জানত তার ছেলে নিঃসন্দেহে জানতে চাইবে ছেলে বউয়ের কথা। ঘটনাচক্রে দেখা যায় কথা প্রসঙ্গে সৌখী তার মাকে প্রশ্ন করেছে তার বউ হঠাৎ বাপের বাড়ি কেন? সতীনাথ লিখেছেন—
“ছেলে ছেলে করে মরে সৌখী। …শরীর খারাপের কথা শুনলে হয়তো সৌখী এখানে আর একদিনও থাকবে না”।
এতদিন পর বাড়ি ফিরে ছেলে ও বউয়ের মুখ না দেখে সৌখীর বাড়ি ফেরার আনন্দ মুহূর্তেই কর্পূরের মতো উে যায়। আন্তর্মানবিক সম্পর্কগুলি কীভাবে আমাদের মনের মধ্যে ফল্গুধারার মতো ক্রিয়াশীল থাকে, তা দেখিয়েছেন সতীনাথ ভাদুড়ী।