‘আগে সে ছিল ডাকাতের বউ। …তার পরিচয় ডাকাতের মা বলে।’’ –‘ডাকাতের বউ’ কীভাবে ‘ডাকাতের মা’-এ পরিণত হয়েছে, তা দেখাও।

ডাকাতের বউয়ের ডাকাতের মা’-এ রূপান্তর: নিম্নবর্গের প্রাত্যহিক দিনযাপনের চিত্র অঙ্কনে ক্লান্তিহীন সতীনাথের ‘ডাকাতের মা’ গল্পটি নানা কারণে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য।

          সতীনাথ ভাদুড়ী সৌখীর মায়ের চরিত্র অঙ্কনে প্রথমেই তার পাঠককে বলে দিয়েছেন, এই চরিত্রটির একটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে—

“আগে সে ছিল ডাকাতের বউ। সৌখীর বাপ মরে যাবার পর থেকে তার পরিচয় ডাকাতের মা বলে”।

এরপরেই সৌখীর মায়ের কার্যকলাপ বর্ণিত হয়েছে। কীভাবে সে পুলিশের সঙ্গে মোকাবিলা করে, কীভাবেই বা দলের ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে, সে বিষয়গুলি লেখক নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন।

স্বামী ও সন্তানের কর্মের সঙ্গে তার জীবন একই সূত্রে বাঁধা পড়েছে। তাই একটা অনুশোচনাবোধ ও আশঙ্কা সবসময় তার মনের মধ্যে লালিত হতে থাকে। সতীনাথ লিখেছেন—

“ঝি-চাকরের কাজও তো আমরা করতে পারি না। করলেই বা রাখতে কে? সৌখীর মা-বউকে কেউ বিশ্বাস পায়!”

অনেকদিন পর ছেলে বাড়ি ফেরার আনন্দে মায়ের বুকের মধ্যে যেভাবে তোলপাড় করে সেই বোধের বিশ্লেষণে সতীনাথ লিখেছেন—

“বুড়ি ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছে।…এ ছেলে বুড়ো হয়েও সেই একইরকম থেকে গেল।…এই আনন্দ আর রাখবার জায়গা নেই”।

সতীনাথ অবশ্য এই চরিত্রের বিবর্তন দেখালেন। বৃদ্ধা মা ছেলেকে খাওয়ানোর চিন্তায় সারারাত দুটি চোখের পাতা এক করতে পারেনি। তার মাথার মধ্যে সর্বক্ষণ ঘুরেছে একটাই মাত্র প্রশ্ন— “সৌখীকে কী খেতে দেবে কাল সকালে সেই হয়েছে বুড়ির মস্ত ভাবনা”।

          আর সেই ভাবনা থেকে মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে সে চুরি করেছে বহুপ্রাচীন একটি লোটা। আর এতেই ঘটেছে বিপত্তি। সৌখীর কথানুসারে দারোগা যখন সৌখীকে পুনরায় জেলখানার উদ্দেশ্যে নিয়ে চলে সেই মুহূর্তের পরিস্থিতি বর্ণনায় সতীনাথ লিখেছেন—

“মা তখনও মেঝেতে পরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। উনোনে চড়ানো আলুর তরকারির পোড়া গন্ধ সারা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে”।

বস্তুত ‘ডাকাতের মা’ গল্পের সৌখীর মা ‘ডাকাতের বউ থেকে ‘ডাকাতের মা’-এ পরিণত হয়েছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত