“ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তোমাদের তলোয়ার পৌঁছায় না”।–কার সম্পর্কে, কে একথা বলেছেন? এ বক্তব্যের তাৎপর্য কী?

[উ] ৭.১) কার সম্পর্কে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত ‘গুরু’ নামাঙ্কিত নাটকে মহাপঞ্চক সম্বন্ধে এই বক্তব্য।

৭.২) বক্তা

উদ্ধৃত বক্তব্যটি এই নাটকের মূল চরিত্র দাদাঠাকুর করেছেন।

৭.৩) এই বক্তব্যের তাৎপর্য

রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু’ নাটকে দাদাঠাকুর যে কথাগুলি বলেছেন তা মূলত রবীন্দ্রনাথেরই কথা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাটকে সন্ন্যাসী, কবি, ঠাকুরদা প্রমুখ চরিত্রকে রেখে তাঁর নিজস্ব বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দাদাঠাকুরের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে।

প্রথম যূনক দাদাঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে মহাপঞ্চকে বন্দি করার কথা বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্নের উদ্ধৃত উক্তি দাদাঠাকুর উল্লেখ করেন।

দাদাঠাকুরে নেতৃত্বে যূনকরা অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে ফেলার পর একে একে সকলেই সেই পরিবর্তনকে মেনে নেয়। বাইরের আলো, বাতাস বা পাখির ডাকে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে ছেলের দল চায় ছুটে বেড়াতে। আকাশের নীলিমায় মুগ্ধ ও রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে তারা।

        কিন্তু মহাপঞক কিছুতেই তার সংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে অতিক্রম করতে পারে না। মহাপঞক আপাতভাবে শাস্ত্র-নির্ভর প্রথাসর্বস্ব জীবনের অনুসারী। যুক্তি-তর্ক তাঁর অচল, বিশ্বাস আর সংস্কারের দাসত্বই একমাত্র সত্য। তিনি বলেছেন—

“পাথরের প্রাচীর তোমরা ভাঙতে পরো, লোহার দরজা তোমরা খুলতে পারো, কিন্তু আমি আমার ইন্দ্রিয়ের সমস্ত দ্বার রোধ করে এই বসলুম”।

মহাপঞ্চকের এই বক্তব্য প্রমাণ করে, তিনি সংস্কারকেই ধর্ম বলে মনে করেন। তাঁর কাছে জ্ঞান-বিজ্ঞান কিংবা স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার কোনো জায়গা পায় না। এজন্যে তাঁর সম্পর্কে দাদাঠাকুর এই মন্তব্যটি করেছেন।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত