[উ] ৬.১) অচলায়তনের পরিণত হওয়ার কাহিনি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষের বিজ্ঞান বিরোধী চিন্তা-চেতনার হাজারতর নিয়ম নীতিকে তুলে ধরা হয়েছে।
‘আয়তন’ হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে সংস্কার পালনই একমাত্র কথা। সেই সংস্কার শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে, মনের কোনো উন্নতি সাধন করে না।
অচলায়তনের সর্বকনিষ্ঠ শিশু শিক্ষার্থী সুভদ্র উত্তর দিকের জানালা খুলে মহাপাপ করেছে। তাই তাকে অন্ধকার ঘরে আবদ্ধ থেকে ‘মহাতামস’ পালন করতে বলা হয়। স্বয়ং আচার্য এই কঠিন নিয়ম-নিষ্ঠাকে অস্বীকার করায় মহাপঞক বলেছে, “উনি আজ সুভদ্রকে বাঁচাতে গিয়ে সনাতন ধর্মকে বিনাশ করবেন”। এই বক্তব্যের মধ্যে চিন্তার সংকীর্ণতা বর্তমান।
সুভদ্রের পাপকর্মের বিচারক উপাধ্যায় কুলদত্তের ‘ক্রিয়া সংগ্রহ’, ভরদ্বাজ মিশ্রের প্রয়োগ প্রভৃতি মুখস্থ রেখেছেন। ফলে আয়তনের দেওয়ালে গোলাকার, চতুষ্কোণ ইত্যাদি অঙ্কনের ফল কী হয়, তা তার ঠোঁটস্থ।
অচলায়তনের বালকরা নানারকম বিধিনিষেধ মানে। তাই তাদের কাকিনী সরোবরের নৈঋত কোণে ঢোঁড়াসাপের খোলস খুঁজে কালো ঘোড়ার লেজের শক্তগাছি চুল দিয়ে পুড়িয়ে ধোঁয়া করতে হয়। তাদের বিশ্বাস, পূর্বপুরুষেরা সেই ধোঁয়ার ঘ্রাণ নিতে আসবেন।
পঞ্চকের গানকে এখানে ‘সর্বনাশ’-এর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আবার স্থবিরক সম্প্রদায়ের মন্ত্র পাওয়ার জন্য চণ্ডক নামক এক যূনকের শিরচ্ছেদ করতেও দ্বিধা করেন না স্থবিরক পত্তনের রাজা মন্থরগুপ্ত। এভাবেই সংস্কারের শাসন অচলায়তনে জন্ম দেয় অন্ধত্ব ও ঔদ্ধত্যের, যা প্রাণের বিকাশকে ব্যাহত করে। এবং এভাবেই ‘শিক্ষায়তন’ ‘অচলায়তন’এ রূপান্তরিত হয়েছিল।
৬.২) কারা লড়াই করতে এসেছিল
অচলায়তনে গুরু আসবার কথা। কিন্তু খবর এসে পৌঁছোয় শত্রুসৈন্য অচলায়তনের প্রাচীন ভেঙে লড়াই করতে এসেছে। যোদ্ধার বেশে প্রবেশ করেন দাদাঠাকুর। তিনি জানিয়ে দেন—তিনিই গুরু। সঙ্গে অসংখ্য যূনক সৈন্য।
৬.৩) কেন লড়াই করতে এসেছিল
দাদাঠাকুর এবং যূনকবাসী লড়াই করে সংস্কারের প্রাচীরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। যে সংস্কার শুধু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, মানুষের মূল্যবোধকে মিশিয়ে দেয় মাটির সঙ্গে—সেই সংস্কারকে রবীন্দ্রনাথ অস্বীকার করেছেন। তাই দাদাঠাকুর অস্ত্র হাতে এসেছিলেন।