[উ] গুরু চরিত্রের স্বরূপ : ‘গুরু’ নাটকটি ভাবপ্রধান। এখানে শাস্ত্র-আচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মিথ্যা সংস্কার শুধু মানুষকে ভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়—এই বিষয়টি বোঝাতে গুরু চরিত্রের প্রয়োজন ছিল। এই চরিত্রটির স্বরূপ বিশ্লেষণে কতকগুলি বিষয় উঠে আসে। যেমন—
প্রথমত।। সংস্কারবিরোধী চরিত্র
অচলায়তনের সবার কাছে গুরু হলেন পূজনীয়। তিনি সবার ঊর্ধ্বে। অচলায়তনের প্রায় প্রত্যেকেই হাজারতর সংস্কার মানে। কিন্তু গুরু সংস্কার মুক্ত। তিনি সংস্কার থেকে মানুষকে টেনে আনেন মানবতার বেদীতলে।
দ্বিতীয়ত ৷৷ শিক্ষার্থীর চোখে
শিক্ষার্থীদের চোখে গুরু হলেন, অখণ্ড শক্তি। তাঁকে সমস্ত শিক্ষার্থী মান্য করে। অচলায়তনের সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। তাই গুরুর আগমনের জন্যে সবার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। যেমন— জয়োত্তম বলেছে, ‘আরে ছুঁয়ো না; এ-সব মাঙ্গল্য। গুরুর জন্যে সিংহদ্বার সাজাতে চলেছি।’
তৃতীয়ত৷৷ জ্ঞানবাদী মহাপঞ্চকের চোখে
জ্ঞানবাদী মহাপঞ্চক মনে করেন, সংস্কারের মধ্যেই রয়েছেন গুরু। তাই বিদ্যায়তনের মধ্যে অর্থহীন আচারকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাপঞ্চক। তাঁর ভাই পঞ্চককে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন, ‘পাষণ্ড’ রূপে। কেননা, সে প্রাচীর ডিঙিয়ে যূনকদের সঙ্গে মিশেছিলো।
চতুৰ্থত৷৷ কর্মবাদী যূনকদের চোখে
কর্মবাদী যূনকরা অচলায়তনের বাইরে বাস করত। তারা কর্ম পাগল। তারা দর্ভকপল্লিতে থাকে। তারা কর্মের মাঝখানে দাদাঠাকুরকে পেয়েছিল।
পঞ্চমত৷৷ ভক্তিবাদী দর্ভকদের চোখে
ভক্তিবাদী দর্ভকদের চোখে গুরু হলেন সবার উপরে। তারা গুরুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাদের কাছে অন্য কোনো সংস্কার ছিল না। তারা গুরুর কাছেই সর্বস্ব অর্পণ করেছিল।
ষষ্ঠত ৷৷ পঞ্চকের চোখে
পঞ্চকের চোখে গুরু হলেন সহজ আনন্দের প্রতীক। তার কাছে গুরু সমস্ত সংস্কারের ঊর্ধ্বে। তিনি মানুষকে সংস্কার মুক্ত করেন।
সপ্তমত ৷৷ রবীন্দ্র-দৃষ্টিতে গুরু
রবীন্দ্রনাথ ‘গুরু’ চরিত্রকে বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। কেননা, গুরু সংস্কার মানতেন না। তাঁর চরিত্রে জ্ঞান-কর্ম ও ভক্তির ত্রিবেণী সংগ্রাম সাধিত হয়েছে।