“সব শিক্ষা একটি সার্কাস” – ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতা অবলম্বনে শিক্ষা সার্কাসের সঙ্গে কীভাবে তুলনীয় আলোচনা করো।

(উত্তর)

সূচনা :

কবি আইয়াপ্পা পানিকর ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। সারাজীবন অধ্যাপনা করেছেন। কাজেই এদেশীয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত পরিচয় তিনি জানতেন। এই শিক্ষাব্যবস্থার বাইরের ও ভিতরের রূপ তাঁর অজানা ছিল না। তিনি ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় এদেশীয় বর্তমান শিক্ষার বাইরের ও ভিতরের রূপটিতে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন।

সার্কাসের সঙ্গে তুলনা

কবি আইয়াপ্পা পানিকর আলোচ্য কবিতায় প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমালোচনা করেছেন। তিনি শ্রেণি-উত্তরণের শিক্ষাকে প্রকৃত শিক্ষা বলেননি। ষোলোটি পংক্তিতে বিন্যস্ত এই কবিতার শেষ চারটি পংক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে কবি সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে শিক্ষার্থীর মনের ভুবন যে আলোকিত হবে না – সে বিষয়ে কবি স্পষ্ট অভিমত জ্ঞাপন করেছেন। শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। আর চিন্তা-চেতনা, নিজস্ব ভাবনার বিকাশ হয় না। সব শ্রেণির শেষ হয়ে গেলেও শিক্ষার্থী পুনরায় পরের শ্রেণিতে ফিরতে চায়। কবি লিখেছেন, শিক্ষার্থীর অভিমত এমন –

“যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়,

আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব।”

কবির মনে হয়েছে, শিক্ষার্থীর এই মনোভাব প্রমাণ করে তার শিক্ষা পূর্ণতা পায়নি। তার মনের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়েছে। সুতরাং এই শিক্ষা সার্কাসের মতো। শুধুমাত্র এই শিক্ষা সার্কাসের খেলার মতো একটা দড়ি থেকে আর একটা দড়িতে যাওয়ার মতো কিংবা একটি ধাপ থেকে পরের ধাপে যাওয়া। এই পদ্ধতি নেহাৎ যান্ত্রিক।

পরীক্ষা-নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় শুধুমাত্র মুখস্থ বিদ্যার অনুশীলন হয়। শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আসে না। বিশ্বের নব নব বিজ্ঞানের দ্বার উন্মোচনের প্রয়াস দেখা যায় না তাদের মধ্যে। এই শিক্ষা তাই সার্কাসের সঙ্গে তুলনীয়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত