“শিক্ষার সার্কাস” কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।

(উত্তর) সূচনা : কোনো সাহিত্য-সৃষ্টির নামকরণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কোনো সাহিত্যের শিরোনামের মধ্যেই প্রকাশিত হয় সেই সাহিত্য-কর্মের মূল বক্তব্য। নামকরণ কখনো কখনো চরিত্র কেন্দ্রিক হয়, কখনো হয় বিষয়কেন্দ্রিক, কখনো হয় ব্যঞ্জনাধর্মী। মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকরের ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি বর্তমান সময়ের নিরিখে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই কবিতার নামকরণ আলোচনায় কিছু প্রসঙ্গ এসে যায়, সেগুলি আলোচনা করা হল –

শ্রেণিকক্ষ সর্বস্ব জ্ঞান : অলোচ্য কবিতায় কবি যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমাদের সামনে উপস্থাপিত করেছেন সে শিক্ষাব্যবস্থা শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। শ্রেণিকক্ষে পাঠ্যপুস্তক ভিত্তিক এই শিক্ষা এবং এই শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনো উচ্চমানের হয় না।

অসম্পূর্ণ শিক্ষা : শিক্ষা মানুষের জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করে। নব নব প্রতিভার উন্মেষ শিক্ষার মাধ্যমেই সম্পন্ন হতে পারে। অথচ কবি প্রত্যক্ষ করেছেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রকৃত শিক্ষার বদলে শিক্ষার্থীকে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগী মানসিকতা এঁকে দেয়। এই ধরনের শ্রেণি উত্তরণের শিক্ষা মানুষের মঙ্গলসাধন করতে পারে না।

শিক্ষা যখন সার্কাস : কবি বলেছেন – “’সব শিক্ষা একটি সার্কাস” অর্থাৎ শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন কবি। এবং এই শিক্ষা শুধুমাত্র এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার শিক্ষা। এই অসম্পূর্ণ শিক্ষায় প্রকৃত জ্ঞানের কোনো স্থান নেই,

“জ্ঞান কোথায় গেল?

সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা!”

নামকরণের সার্থকতা

আলোচ্য ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবি বর্তমানের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। চারটি স্তবকে এবং ষোলোটি পঙ্‌ক্তিতে বিন্যস্ত কবিতাটিতে কবি পাঠকের সামনে উপস্থাপিত করেছেন শিক্ষার প্রকৃত স্বরূপকে। একটি সার্কাস খেলায় বিভিন্ন প্রতিযোগীর মতো শিক্ষার্থীরাও যেন ক্রমশ প্রতিযোগিতায় অভ্যস্থ হয়ে উঠছে। সার্কাসের খেলোয়াড় যেমন একটির পর একটি বাধা অতিক্রম করে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে থাকেন; ঠিক তেমনিভাবেই আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত হচ্ছি প্রকৃত জ্ঞানকে সরিয়ে রেখে। অর্থাৎ প্রচলিত এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের করে তুলছে ‘well trained’, ‘well educated’ নয়। ফলত কবিতার নামকরণ ব্যঞ্জনাধর্মী হয়েছে এবং কবিতার নামকরণ যথার্থ।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত