আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কবির অনাস্থার কারন কী?

(উত্তর)

উপস্থাপনা :

কবি আইয়াপ্পা পানিকর ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। সারাজীবন অধ্যাপনা করেছেন। কাজেই এদেশীয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত পরিচয় তিনি জানতেন। এই শিক্ষাব্যবস্থার বাইরের ও ভিতরের রূপ তাঁর অজানা ছিল না। তিনি ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় এদেশীয় বর্তমান শিক্ষার বাইরের ও ভিতরের রূপটিতে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন।

অনাস্থার কারণ

শিক্ষার্থী ক্লাসের পর ক্লাস উত্তীর্ণ হয়ে তার শিক্ষার ধারাটিকে এগিয়ে নিয়ে চলে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের দিকে। পরে উচ্চমাধ্যমিকের বৃত্ত টপকে কলেজীয় শিক্ষার স্তরে। এভাবে স্তরের পর স্তর অতিক্রম করে শিক্ষার্থীর শিক্ষাধারা এগিয়ে চলে। পাঠক্রম নির্দেশিত শিক্ষা অনুসরণে শিক্ষার্থীর এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আছে একে অপরকে টপকে যাওয়ার প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেজন্য কবি শিক্ষাকে বলেছেন একটি সার্কাস, শিক্ষার ক্রীড়াচক্র। চক্রাকারে আবর্তমান শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার উদ্দেশে চলমান। কিন্তু শিক্ষা যেহেতু পুথি সর্বস্ব, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্লাস টপকানোর খেলা, এমনকি যেকোনো উপায়ে ডিগ্রি, ডিপ্লোমা পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা ! – তাই এই শিক্ষা জ্ঞানহীন, প্রাণহীন, নীরস ও নিরানন্দ।

নীরস ও প্রাণহীন পুথিচর্চায় জ্ঞান বা চেতনার বিকাশ হয় না। দুঃখের কথা, যে জ্ঞানার্জন অন্ধকার দূর করে, অন্তরকে আলোকিত করে, মানবিক গুণে সমৃদ্ধ করে; তার তো চর্চা হয় না এদেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থায়। কাজেই জ্ঞানচর্চার নামে এক মস্ত ধোঁকাবাজি চলে। ধোঁকা মানেই ধাপ্পা বা ফাঁকি। উচ্চশিক্ষিত হয়েও কত মানুষ, অমানুষ থেকে যায় !

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত