[মান – ৫] প্রত্যয় কাকে বলে? ব্যবহারিক প্রয়োগের অবস্থান অনুযায়ী প্রত্যয়কে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? প্রত্যেক ভাগের একটি করে উদাহরণ দাও।

[উ] যেসব ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি ধাতু বা পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন পদ তৈরি করে। অথবা কখনো কখনো পদেরও পরিবর্তন ঘটায় তাকে প্রত্যয় বলে।

প্রত্যয়ের শ্রেণীবিভাগ : ব্যাবহারিক প্রয়োগের অবস্থান অনুযায়ী প্রত্যয়কে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা— ক. কৃৎ প্রত্যয়, খ. তদ্ধিত প্রত্যয়।

ক. কৃৎ প্রত্যয় : যে প্রত্যয় ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।

দৃষ্টান্ত : ভুজ্ (ধাতু) + অন্‌ (প্রত্যয়) = ভোজন। পূজ্ (ধাতু) + অনীয় (প্রত্যয়) = পূজনীয়।

খ. তদ্ধিত প্রত্যয় : যে প্রত্যয় শব্দ বা পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আরেকটি নতুন শব্দের জন্ম দেয় তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।

দৃষ্টান্ত : চালাক (শব্দ) + ই (প্রত্যয়) = চালাকি। বাঁশি (শব্দ) + ওয়ালা (প্রত্যয়) = বাঁশিওয়ালা। 

[৩] ব্যাকরণসম্মত ও আভিধানিক রূপমূল-এর পরিচয় দাও।

[উ] অর্থের প্রকৃতি অনুযায়ী রূপমূলের দুটি শ্রেণি। যথা—আভিধানিক ও ব্যাকরণসম্মত রূপমূল।

১) আভিধানিক রূপমূল

যেসব রূপমূলের অর্থ অভিধানে পাওয়া যায়, তাদের আভিধানিক রূপমূল বলে। এর স্বাধীন ও পরাধীন রূপ বর্তমান।

স্বাধীন আভিধানিক রূপমূল : বিশেষ্য, ক্রিয়া ইত্যাদি পদগুলি স্বাধীন আভিধানিক রূপমূল। সাধারণ যেকোনো শব্দ যেগুলি অভিধানে সংকলিত হয়, স্বাধীন আভিধানিক রূপমূল। 

পরাধীন আভিধানিক রূপমূল : অন্যদিকে, যেসমস্ত শব্দ অভিধানে থেকেও স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না, তাদের পরাধীন আভিধানিক রূপমূল বলে। যেমন—প্রত্যয়। ‘বাঁশিওয়ালা’—‘বাঁশি’ স্বাধীন আভিধানিক রূপমূল; ‘ওয়ালা’ পরাধীন আভিধানিক রূপমূল।

২) ব্যাকরণসম্মত রূপমূল

যেসব রূপমূলের অভিধানে স্থান নেই অথচ ব্যাকরণে এরা অপরিহার্য তাদের ব্যাকরণসম্মত রূপমূল বলে। এর দুটি ভাগ…

স্বাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল : যে ধরনের রূপমূলের স্বাধীন ব্যবহার অথচ অভিধানে এর স্থান নেই, তা হলো স্বাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল। যেমন—চেয়ে, টা ইত্যাদি।

পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল : পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূলের দুটি ভাগ – সমন্বয়ী ও নিষ্পাদিত রূপমূল।

[] যে পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল সমন্বয় প্রক্রিয়ায় শব্দকে পদে পরিণত করে তাকে সমন্বয়ী রূপমূল বলে। এর ফলে পদ স্থিরতা প্রাপ্ত হয়, তাকে আর বড়ো করা যায় না বা নতুন পদে পরিণত করা যায় না। বিভক্তি হল সমন্বয়ী রূপমূল। উদাহরণ। যেমন – ‘রমা মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এল। এখানে মেয়ে শব্দের সঙ্গে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে ‘মেয়েকে’পদে পরিণত হয়েছে এবং স্থিরতা লাভ করেছে। আর মেয়েকেরা বা মেয়েকেটা হওয়া সম্ভব নয়।

[] যখন পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল নতুন পদ গঠনের ক্ষমতা রাখে, তখন সেগুলিকে নিষ্পাদিত রূপমূল বলা হবে। প্রত্যয় এবং উপসর্গগুলি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন পদ নিষ্পন্ন করে। তাই এইগুলি নিষ্পাদিত রূপমূল। এর সাহায্যে কখনও পদের পরিবর্তন ঘটে যেমন – পাকা (বিশেষণ) + মি (প্রত্যয়) = পাকামি (বিশেষ্য)।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত