‘সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সেইসব খুনীদের সে শনাক্ত করছে’—কে শনাক্ত করছে? কাদের, কেন খুনি বলা হয়েছে? (হাত বাড়াও]

(উত্তর)

প্রথম অংশ : উদ্ধৃতাংশটি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ গদ্যগ্রন্থের ‘হাত বাড়াও’ রচনা থেকে গৃহীত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পঞ্চাশের মন্বন্তরে বিপর্যস্ত বাংলার দুর্ভাগ্যগ্রস্ত অসহায় মানুষদের প্রতিনিধিরূপে বারো-তেরো বছরের এক শীর্ণকায়, মাজা-পড়া উলঙ্গ ছেলে তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে ‘সেইসব খুনীদের’ শনাক্ত করছে।

দ্বিতীয় অংশ : ‘সেইসব খুনী’ বলতে যাদের ষড়যন্ত্রে সোনা ছড়ানো শস্যশ্যামল বাংলাদেশ যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের কবলে অনাহারের শ্মশানে পরিণত হয়েছিল, তাদের বোঝানো হয়েছে। তাদের স্বেচ্ছায় তৈরি দুর্ভিক্ষের কবলে বাংলার অগণিত মানুষ অনাহারে নিরাশ্রয় হয় দিন কাটিয়েছিল। গুটিকয়েক মানুষের লোভ কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে নিজেদের উদর পরিপূর্ণ করেছিল। এদেরকেই লেখক ‘খুনী’ বলেছেন।

১৩৫০ বঙ্গাব্দে প্রকৃতির অক্ষমতা আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইংরেজ সরকার-সহ কিছু আড়তদার-মজুতদারের বানিয়ে তোলা বৃহত্তর আকালের পরিস্থিতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল বাংলার সিংহভাগ শ্রমজীবী মানুষ। গুটিকয়েক মানুষের লোভ ও লাভের নেশা অধিকাংশ মানুষকে অনাহারী বানিয়ে তুলেছিল। এইসকল পুঁজিপতিরা শ্রমের যথাযথ মূল্য না দিয়ে কৃত্রিমভাবে অভাব সৃষ্টি করে দুর্ভিক্ষকে অনিবার্য করে তুলেছিল। হাঁটতে না পারা, মাজা পড়ে যাওয়া শীর্ণকায় ছেলেটি এইসকল অসহায় মানুষের প্রতিনিধি, সে তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে শনাক্ত করেছে সেই মানুষগুলিকে যারা গ্রামবাংলার মানুষের স্বপ্নকে খুন করেছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত