‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা অবলম্বনে সাধুচরণ ও মুস্তাফার জীবনকাহিনি বর্ণনা করো। (মেঘের গায়ে জেলখানা)

(উত্তর)

সূচনা : লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ (‘আমার বাংলা’ গ্রন্থ) রচনায় জেলখানার ইয়ার্ডে থাকা কয়েদিদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। সেই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে সাধুচরণ ও মুস্তাফার জীনবকাহিনি। লেখক কলমের স্বল্প আঁচড়ে এদের দুজনের কাহিনি অঙ্কন করেছেন।

সাধুচরণের কথা : সাধুচরণ জয়নগরের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা। সে শৈশবে পিতৃমাতৃহীন হলে কোনো আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় না পেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ছিঁচকে চুরি শুরু করে এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাকা চোরে পরিণত হয়। সেই থেকেই সে জেলে বন্দি। মাঝখানে সংসার জীবনযাপন করলেও তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি পেয়াদার তাগাদা ও উৎপীড়ন, অত্যাচার। তাই সে অনন্ত বন্দি জীবনকেই মেনে নিয়েছে।

মুস্তাফার কথা : বক্সার জেলে থাকা বালক অপরাধীদের মধ্যে কেউ পকেটমার, কেউ ছিঁচকে চোর। এদের নিয়ে তৈরি হয়েছে বক্সা জেলখানার ‘ছোকরা ফাইল’। ছোকরা অপরাধীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক বলেছেন, “এরা সব সাধুচরণের অতীত, সাধুচরণ এদের ভবিষ্যৎ”।

বন্দিশালায় থাকা দশ বছরের ফুটফুটে সুন্দর ছেলে মুস্তাফা এন্টালির কোনো এক স্কুলে পড়ত। তার রাজমিস্ত্রি বাবা তিনতলা সমান উঁচু বাঁশের ভারা থেকে পড়ে মৃত্যুর পর বিধবা মা ও ভাই-বোনকে নিয়ে মুস্তাফা সমস্যার সম্মুখীন হয়। মাইনে দিতে না পারায় স্কুল থেকে নাম কেটে যাওয়ার পর উপার্জনের জন্য বস্তির পকেটমার সর্দারের দলে যোগ দেয় মুস্তাফা। সে পকেটমারির কারণে এর আগে চারবার জেল খেটেছে। জেলখানায় সে কাউকে পরোয়া করে না। লেখক তাকে স্কুলে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করায় উত্তরে সে বলেছিল—ইচ্ছে করলেও স্কুলে যাওয়া যায় না।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত