“জেলখানাটা পাহাড়ের তিনতলা সমান একটা হাঁটুর উপর” – কোন জেলখানা? সেখানে সাধারণ কয়েদিদের ওপর কীরকম অত্যাচার করা হত? (মেঘের গায়ে জেলখানা)

(উত্তর)

কোন্‌ জেলখানা : লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ (‘আমার বাংলা’ গ্রন্থ) প্রবন্ধে বক্সার জেলখানা সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করেছেন।

অত্যাচারের বর্ণনা : আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় বক্সার জেলের কয়েদিদের জীবনযাত্রা বর্ণনা করেছেন। খোঁয়াড়ের পশুর মতো কয়েদিদের ঠাসাঠাসি করে রাখা হত। সূর্যোদয়ের সময় তাদের লকআপ থেকে বার করা হত এবং সূর্যাস্তের সময় লকআপে ঢোকানো হত। কয়েদিদের আচরণে ত্রুটি ঘটলে জুটত পিঠে ডাণ্ডা অথবা লোহার নাল দেওয়া বুটের লাথি। কোনো নালিশ হলে শাস্তির ব্যবস্থা ছিল ডিগ্রিবন্ধ, মার্কাকাটা, কম্বলধোলাই কিংবা মাড়ভাত। 

চারদিক বন্ধ ছোটো নির্জন কুঠুরি হল ডিগ্রি। ডিগ্রিবন্ধ শাস্তিতে মাসের পর মাস কয়েদিদের পায়ে লোহার বেড়ি দিয়ে রাখা হত। কয়েদিদের তিন মাস সাজা মাফ করার পদ্ধতি ছিল ‘মার্কা’। জেল-কর্তাদের মন জোগাতে না পারলে ‘মার্কা’ কাটা যেত । কম্বল দিয়ে সারা দেহ ঢেকে লাঠি দিয়ে মারার নাম ‘কম্বলধোলাই’ । মুচি-মেথর-হাড়িদের কাজ থেকে শুরু করে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সকল কাজ কয়েদিদের করতে হত। তাছাড়াও দড়িচাল্লি, ধোবিচাল্লি, ঘানিকর, মিস্ত্রিঘর, ছাপাখানা, গোয়ালঘর, তরকারি বাগান— নানা রকমের কাজ বিনা মজুরিতে ক্রীতদাসের মতো করতে বাধ্য হত কয়েদিরা। বক্সা জেলের এইরকম দুঃসহ জীবন কাটাতো সাধারণ কয়েদিরা।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত