(উত্তর)
কে বলেছেন : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্ক নাটকের প্রধান চরিত্র বৃদ্ধ অভিনেতা রজনী চট্টোপাধ্যায় নিজের সম্পর্কে এমন হতাশা-ব্যঞ্জক কথা বলেছেন। জীবনের অন্তিম পর্বে পৌঁছে রজনীর মনে হয়েছে, তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনের শেষ পর্বে উপনীত হয়েছেন তিনি–সেই প্রসঙ্গে এই মন্তব্য।
অপমৃত্যু কীভাবে ঘটে : একজন মঞ্চাভিনেতার জীবন-জিজ্ঞাসার দ্বান্দ্বিক দিক এই নাটকে বর্ণিত হয়েছে। সেই অভিনেতা বা ‘থিয়েটারওয়ালা’ হলেন ৬৮ বছর বয়সী রজনী চট্টোপাধ্যায়। অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে, অভিনয়ের প্রতি ভালোবেসে পুলিশের চাকরি ছাড়তেও দ্বিধা করেননি তিনি। আবার ‘আলমগিরের পার্টে’ দুর্দান্ত অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে একটি মেয়েও প্রেমে পড়ে যায় তার। কিন্তু সামাজিকতার দোহাই দিয়ে রজনী চাটুজ্জের প্রেম বিবাহে পরিণতি পায় না। অভিনয় তাদের উভয়ের প্রেমের পরিণতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রতাখ্যানের রাত্রেই রজনী বুঝেছিলেন, অভিনেতার কোনো সামাজিক সম্মান নেই, তারা এক অস্পৃশ্য ভাঁড়।
প্রেমিকা দূরে সরে গেলে, এতদিনের ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা নিমেষে মিথ্যে হয়ে যায় রজনীর কাছে। ক্রমশ তিনি অভিনয়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকেন। থিয়েটারের যেকোনো পার্টে অভিনয় করতে শুরু করেন। একসময় বয়স বাড়ল, গলা নষ্ট হয়ে গিয়ে স্বর বিকৃত হল। নতুন চরিত্র ফুটিয়ে তোলবার ক্ষমতা কমে গেল। একসময়ের জনপ্রিয় রজনী চাটুজ্জে পূর্বের প্রায় সমস্ত গুণ হারিয়ে থিয়েটারের অবাঞ্ছিত কর্মী হিসেবে রয়ে গেলেন তুচ্ছ চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে। এই সময় রজনীর মনে হল, তার প্রতিভার মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে; অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ দেয়ালে দেয়ালে লিখিত হয়েছে।
দেশে দেশে থিয়েটারের প্রতি একনিষ্ঠ অভিনেতাদের এরূপ করুণ পরিণতি যে কতটা স্বাভাবিক, তা রুশ সাহিত্যিক আন্তন চেকভের ‘Swan Song’ কিংবা আমাদের আলোচ্য ‘নানা রঙের দিন’ নাটক থেকে বোঝা যায়।