[মান – ৫] “অভিনেতা মানে একটা চাকর – একটা জোকার, একটা ক্লাউন। লোকেরা সারাদিন খেটেখুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটকওয়ালাদের একমাত্র কর্তব্য।” — বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো।

(উত্তর)

প্রসঙ্গ : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটক থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত। নাটকটিতে এক আটষট্টি বছরের প্রবীণ অভিনেতার অভিনয় জীবনের পর্যালোচনা রয়েছে। এক রাতে অভিনয় শেষে মদ্যপান করে গ্রিনরুমে ঘুমিয়ে পড়া রজনীকান্ত হঠাৎ জেগে উঠে রাতের অন্ধকারে, মোমের আলোয় মঞে সহকর্মী কালীনাথের সামনে যেন আত্ম-উন্মোচন করেন।

তাৎপর্য : রাতের মঞ্চে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনী চাটুজ্জে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করলে, প্রম্পটার কালীনাথ তার ভাবনার জগৎকে উসকে দিয়েছিল। ফলে একে একে অতীতের অভিনয় জীবনের প্রত্যাশা-হতাশা ক্রমশ তার সামনে ভেসে ওঠে।

বিগত প্রেমজীবনের প্রসঙ্গে এসে থমকে যান রজনীকান্ত। নাটকের প্রতি যে ভালোবাসার জন্য তিনি সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন, তারই জন্য দীর্ঘদিনের প্রেমসম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে।

ব্যাখ্যা : রজনীকান্ত জীবনে এই চরমতম আঘাতের দ্বারাই সত্য উপলব্ধি করেছেন। নিজেকে তার মনে হয়েছে ‘চাকর’, ক্লান্ত মানুষদের মনোরঞ্জন করাই তাদের কাজ। এখানে শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতার কোনো প্রসঙ্গই যেন নেই। সার্কাসের জোকার যেমন মানুষদের আনন্দ দেয়, অভিনেতাও তেমনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিনোদনের জোগান দেয়। বিনিময়ে মানুষ তাদের প্রশংসা করে, সম্মান জানায়। তবে তা শুধু মঞ্চের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মঞ্চ থেকে নামলে থিয়েটারওলাদের সামাজিক মর্যাদাটুকুও কেউ দেয় না। সমাজের চোখে অভিনেতা নিছক বিনোদনের প্রতীক, যার সঙ্গে সারাজীবন প্রেম চলে, কিন্তু সংসার করা চলে না।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত