(উত্তর)
সূচনা : কোনো শিল্প-সাহিত্যের নামকরণ সংশ্লিষ্ট স্রষ্টার অভিপ্রায়কে প্রকাশ করে। নামকরণের মধ্যেই নিহিত থাকে রচনার মূল উদ্দেশ্য। বলাবাহুল্য, নামকরণ হল সাহিত্যের ভিতরে প্রবেশের চাবিকাঠি। সাহিত্যের নামকরণ সাধারণত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে—
- চরিত্রনির্দেশক,
- ঘটনাকেন্দ্রিক এবং
- ব্যঞ্জনাধর্মী।
‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্কটি ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণের অন্তর্ভুক্ত। নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এই নাটকে এক বিগত দিনের জনপ্রিয় অভিনেতার জীবনালেখ্য প্রকাশ করেছেন।
নাটকের বক্তব্য : এককালের স্বনামধন্য জনপ্রিয় অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে জীবনের উপান্তে এসে পৌঁছেছেন। বর্তমানে তিনি মানুষের কাছে অবহেলিত, অনাদৃত; একাকিত্বে পূর্ণ তার জীবন। কিন্তু একসময় তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাঁকে ঘিরে থাকত জনগণ।
সেই বর্ণময় জীবন একসময় হারিয়ে যেতে শুরু করে তার জীবন থেকে। একে একে তিনি হারিয়ে ফেলেন যৌবন-শক্তি-সম্ভ্রম-প্রেম-নারী। থিয়েটারের জন্য তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে অনিশ্চিত জীবন বরণ করেন। সেই থিয়েটারই এখন তাঁকে বোঝা মনে করে।
জীবন থেকে তিনি বুঝেছেন, ‘থিয়েটারওয়ালারা’ শুধু আনন্দই দিতে পারে, মানুষ তাদের সাহচর্য উপভোগ করে মাত্র। কিন্তু সামাজিক স্থান বা তাদের স্বাভাবিক জীবনে মর্যাদা কোনোটাই তারা পায় না। আজ তিনি নেশাচ্ছন্ন হয়ে – গ্রিনরুমে ঘুমিয়ে থাকেন; অভিনয় শেষ হলে মঞ্চকর্মী রামব্রিজ টাকার বিনিময়ে তাকে ট্যাক্সিতে তুলে দেয়, দামি মদ্যপানের সামর্থ্য নেই তার। পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনেতার জীবনশেষে তিনি মৃত্যুকে দেখতে পান মঞ্চেরই কালো প্রান্তে। প্রতিভা দিয়েও তিনি জয় করতে পারেন না জীবনের শূন্যতা, একাকিত্বকে।
কতখানি সার্থক : একজন অভিনেতার ব্যক্তিজীবন ও অভিনয়জীবনের বহুমাত্রিকতা এভাবেই নাটকটি জুড়ে প্রকাশ করেছেন নাট্যকার। যৌবনের স্পর্ধা, জনপ্রিয়তা এবং পাশাপাশি একাকিত্বময় বার্ধক্য— সবই রজনী চাটুজ্জের জীবনকে কেন্দ্র করে নাটকে উপস্থিত। তাই বলা যেতে পারে, একজন অভিনেতার চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা থেকে অবনমনের এই যে দীর্ঘপথ পরিক্রমা, তাতে মিশেছে নানা রঙের ছাপ। রঙের ভিন্নতা নিয়ে গড়ে ওঠা আলোচ্য নাটকের ‘নানা রঙের দিন’ শিরোনামটি সার্থকভাবে প্রযুক্ত হয়েছে।