(উত্তর)
ভূমিকা : ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের মন্বন্তরে শহর কলকাতায় যে প্রভাব পড়েছিল, সেই প্রেক্ষাপটে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পটি রচনা করেছেন।
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া : মধ্যবিত্ত কেরানি মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে একদিন ফুটপাথে ‘অনাহারে মৃত্যু’ প্রত্যক্ষ করে। ‘অনাহারে মৃত্যু’ সম্পর্কে শুনে বা পড়ে থাকলেও সে স্বচক্ষে দেখেনি। দুর্ভিক্ষের সময় অনাহারে মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা হলেও অনুভূতিপ্রবণ, আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয় তা দেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানসিক আঘাতে বিপর্যস্ত মৃত্যুঞ্জয় অফিসে পৌঁছে কলঘরে গিয়ে বাড়ি থেকে খেয়ে আসা সমস্ত খাবার বমি করে উগরে দেয়। তারপর একগ্লাস জল খেয়ে শূন্যদৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এমনভাবে তাকায় যে, সে নিখিলের উপস্থিতি লক্ষই করেনি। নিখিলের কয়েকটি প্রশ্নের অবিন্যস্ত উত্তরে অনুশোচনায় দগ্ধ মৃত্যুঞ্জয়ের কাতর অবস্থা বোঝা যায়। খাদ্যাভাবে লোকটির মৃত্যুর জন্য সে নিজেকে এবং নিজের ভালো থাকাকে বারবার দায়ী করে। তাই আত্ম-অনুশোচনায়, বিবেকের দংশনে মৃত্যুঞ্জয় তার সমস্ত সত্তায় ক্রমশ ক্ষয় পেয়ে যেতে থাকে।
মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি : ফুটপাথে দেখা অনাহারে মৃত্যুর ঘটনার পর সংসারের ক্ষুদ্র কর্তব্যের গণ্ডিতে মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে বেঁধে রাখতে পারে না। ক্রমে সে অফিসের কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। শহরের ফুটপাথে, বিভিন্ন লঙ্গরখানায় ঘুরে অন্নপ্রার্থী মানুষের ভিড়ে মিশে সে বুঝে নিতে চায়—“কোথা থেকে কিভাবে কেমন করে সব ওলোট পালোট হয়ে গেল”। সবকিছু বুঝেও কিছু করতে না পারার অক্ষমতা শেষপর্যন্ত তাকে বদলে দেয়।
গল্পের পরিণতিতে অন্নহীন মানুষের দলে খুঁজে পাওয়া যায় অন্য এক মৃত্যুঞ্জয়কে। দাড়ি মুখ, খালি গা, ছেঁড়া ন্যাকড়া পরা সেই মৃত্যুঞ্জয় লঙ্গরখানায় অন্যদের সঙ্গে খিঁচুড়ির জন্য কাড়াকাড়ি মারামারি করে বলে –‘গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও!’
মানবিকতার তাড়নায় মৃত্যুঞ্জয় শেষ অবধি মানসিক বিকৃতির শিকার হয়। সমাজ পরিবেশের অসহনীয় চাপ তার সহনশীলতাকে ছাপিয়ে যায় বলে গল্পের পরিণতিতে মস্তিষ্কবিকৃতি দেখা গেছে মৃত্যুঞ্জয়ের।