(উত্তর)
কোন অপরাধ : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার সময় ফুটপাথে নিরন্ন এক ব্যক্তির মৃত্যু দেখে। দুর্ভিক্ষের কারণে অনাহারে ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য মৃত্যুঞ্জয় নিজের উদাসীনতাকে দায়ী করে। বুভুক্ষু মানুষটিকে বাঁচাতে না পারাকে সে ‘অপরাধ’ বলে মনে করে।
কারণ : পঞ্চাশের মন্বন্তরে বিপর্যস্ত মানুষ গ্রাম ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে শহরে ভিড় করে। সরকারি উদ্যোগ, লঙ্গরখানা কোনো কিছুই অগণিত মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে না। ফলে নিরন্ন বহু মানুষকে যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। একদিন আবেগপ্রবণ মৃত্যুঞ্জয় ‘অনাহারে মৃত্যু’ দেখে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বুভুক্ষু মানুষকে বাঁচাতে না পারা তার মনে অনুশোচনা তৈরি করে।
সে ভাবে, নিজে না খেয়ে অন্যকে বাঁচানো যায়, এবং এটাই আদর্শ। নিখিলের যুক্তিবাদও তার ভাবনাকে টলাতে পারে না। তার মতে মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, সমাজের দায়িত্ব মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। নিরন্নদের জন্য যে রিলিফ ওয়ার্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা লোকের অভাবে ঠিকভাবে চলছে না। এদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের দৃঢ় ধারণা হয়, না খেয়ে মরে যাওয়া মানুষটির জন্য সে দোষী।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি না খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু খাদ্য দরকার ততটুকু খাদ্যগ্রহণ করলে হয়তো লোকটা অনাহারে মরত না। এসমস্ত কারণে মৃত্যুঞ্জয় বারবার নিজেকে ‘অপরাধী’ বলেছে। মৃত্যুঞ্জয় এই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে নিজের সুরক্ষিত জীবনের নিরাপত্তা ত্যাগ করে লঙ্গর খানায় ঘুরে ঘুরে, আদি-অন্তহীন ফুটপাথে হেঁটে হেঁটে ক্রমশ বিকারগ্রস্ত হয়ে দুর্ভিক্ষ দুর্গতদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।