(উত্তর)
পাশবিক স্বার্থপরতা : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে অনাহারে মানুষের মৃত্যু দেখে মধ্যবিত্ত, চাকুরিজীবী মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটে।
কঠিন সমাজবাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করে মৃত্যুঞ্জয় চাকরি এবং সংসারকে উপেক্ষা করে নিরন্ন মানুষের সেবা করতে চেয়েছে। সহকর্মী নিখিল তাকে নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করলেও মৃত্যুঞ্জয় নিজের ভাবনা থেকে সরে আসেনি। নিখিল বলেছে, সে যা করতে চায়, তা নীতি-ধর্মের দিক থেকে সঠিক হলেও সমাজধর্মের দিক থেকে সঠিক নয়। “সমাজধর্মের দিক থেকে বিচার করলে দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ।”—নিখিলের বলা এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মৃত্যুঞ্জয় উক্তিটি করেছে।
তাৎপর্য : গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মৃত্যু দেখে সমগ্র সত্তায় ক্রমশ ক্ষয় পেতে থাকে। তার মানবতাবাদী ভাবনার একটি বড়ো দিক, সে যুক্তিবাদী হলেও আদর্শবাদ তার মধ্যে প্রধান। তার যুক্তি এতটাই দরদপূর্ণ ও জোরালো যে, তা তার পরিবার-পরিজনদের কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মৃত্যুঞ্জয় মনে করেছে সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য পারিবারিক দায়ও বিসর্জন দিতে সে রাজি। শুধু দেশের শত শত নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বাঁচানোই তার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। তাই সহকর্মী নিখিলের যে যুক্তিবোধ দেশের অনাহারী মানুষকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে না খাইয়ে মারাকে পাপ বলে; সেই চিন্তা প্রণালীকেই মৃত্যুঞ্জয় ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলে চিহ্নিত করে।