(উত্তর)
সূচনা : আধুনিক বাংলা সংগীত জগতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী, সংগীত পরিচালক, সুরস্রষ্টা এমনকি চলচ্চিত্র প্রযোজক হলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হিন্দি সিনেমার জগতে হেমন্তকুমার নামে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রবীন্দ্রসংগীতেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। বাংলা আধুনিক গান ও সিনেমার গান, রবীন্দ্রসংগীত সর্বক্ষেত্রেই তাঁর অবদান অসামান্য।
সংগীতে অবদান : ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বেসিক ডিস্কের গানে বাঙালি প্রথম তাঁর কণ্ঠ শুনতে পায়। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছায়াছবিতে তিনি নেপথ্য শিল্পীরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। অতি বিখ্যাত বাংলা সিনেমাগুলিতে তাঁর কণ্ঠের জাদু শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। রবীন্দ্রসংগীতের ধারায় হেমন্তের অবদান আলাদাভাবে আলোচনার দাবি রাখে।
‘শাপমোচন’, ‘হারানো সুর’, ‘সূর্যতোরণ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘সপ্তপদী’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘বালিকা বধু’, ‘দাদার কীর্তি’ ইত্যাদি অসংখ্য ছায়াছবিতে তিনি অমর সুরের মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে গিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত গানগুলি হল – ‘মুছে যাওয়া দিনগুলি’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘রানার’ ইত্যাদি। সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানগুলি বাঙালি কখনও ভুলবে না। ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ’, ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ ইত্যাদি গানের সঙ্গে কবি সুকান্তের কথা ও সলিল চৌধুরীর সুরে হেমন্ত গেয়েছেন ‘রানার’ ইত্যাদি গান।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রায় দেড়শোটি বাংলা ছবিতে সুর দিয়েছেন, গান গেয়েছেন। তাঁর প্রয়াণের প্রায় দুই দশক পরেও গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া প্রত্যেক বছর অন্তত একটা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অ্যালবাম প্রকাশ করে থাকে। যে গান তিনি রেকর্ড করেছেন, যে সুর তিনি সৃষ্টি করেছেন, এবং অসংখ্য গায়ক বাংলা এবং ভারতে তাঁর গায়কী ধরন অবিরত নকল/অনুকরণ করার ফলে তাঁর উত্তরাধিকার এখনো জীবন্ত ! সংগীতশিল্পে অবদানের জন্য বহু সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হলেও ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।