(উত্তর)
ভূমিকা : ‘রানার’, ‘বিচারপতি’, ‘অবাক পৃথিবী’ ইত্যাদি বিখ্যাত গণসংগীতের স্রষ্টা সলিল চৌধুরী আজীবন সংগীত নিয়ে গবেষণা করেছেন। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী সলিল চৌধুরীর গানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকলেও বিশেষত বাংলা গানে পাশ্চাত্য রীতির ব্যবহারে তিনি নানা উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখান। তিনি একধারে ছিলেন গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। এ ছাড়াও বাংলা, হিন্দি ও মালয়ালম্ ভাষার বিভিন্ন ছবিতে তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন।
অবদান
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘পরিবর্তন’ ছবির সংগীত পরিচালকরূপে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে হিন্দি ছায়াছবির দুনিয়ায় তিনি পা রাখেন ‘দো বিঘা জমিন’ ছবির সূত্রে। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে মালয়ালম ‘চেম্মিন’ ছায়াছবির সংগীত নির্দেশনা করেন।
সংগীত নির্দেশনার জীবনে তিনি প্রায় ৭৫টি হিন্দি ছবিতে, প্রায় ৪০টি বাংলা ছবিতে, অন্তত ২৬টি মালয়ালম ছবিতে এবং বেশ কিছু মারাঠি, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, গুজরাটি, ওড়িয়া ও অসমিয়া ছবিরও সংগীত পরিচালনা করেন। বাংলা চলচ্চিত্র যেমন, ‘বাঁশের কেল্লা’, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘কিনুগোয়ালার গলি,’ ‘আকালের সন্ধানে’, ‘হারানের নাতজামাই’ প্রভৃতি ছবিগুলির সংগীত পরিচালনার কৃতিত্ব তাঁর । জাগতে রহো, মুসাফির, হাফটিকিট প্রভৃতি হিনি সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি।
বহু পরীক্ষার ফলশ্রুতিতে গণসংগীতে কোরাস গানের প্রভাব ফুটে উঠেছে ‘ও আলোর পথযাত্রী’, ‘হেই সামালো’, ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’— এইসকল কালজয়ী গানে। বলাবাহুল্য, গণসংগীতের ব্যবহারে তিনি উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় রেখেছেন। এছাড়া তিনি ছিলেন ‘বম্বে ইয়ুথ কয়্যায়ে’র প্রতিষ্ঠাতা। একথা বলা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের পরে এমন বহুমুখী, বিচিত্রগামী সংগীত প্রতিভা বাংলা গানের জগতে বিরল দৃষ্টান্ত।