[মান – ৫] বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান আলোচনা করো।

(উত্তর)

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রজনীকান্ত সেন রচিত ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’ গানটি বাঙালি মননে চির জাগরুক হয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী সময়ে রজনীকান্ত সেন গানের ধারায় স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। সমসাময়িক সংগীতস্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কর্তৃক তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

গানের ভুবন : রজনীকান্তের গানে বিভিন্ন ধারার সুরের প্রভাব লক্ষ করা যায়, যথা – টপ্পা, বাউল, কীর্তন, হিন্দুস্থানি মার্গ সংগীত।  বলাবাহুল্য ভক্তিমূলক, দেশাত্মবোধক, হাস্যরসাত্মক গানে তাঁর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। 

(১) তাঁর ভক্তিমূলক গানগুলি বাংলা গানের ভুবনে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। ‘তুমি নির্মল করো মঙ্গল করে’, ‘আমি অকৃতি অধম’ ইত্যাদি ভক্তিমূলক গানে নিবেদনের আর্তি ও আন্তরিকতা নিহিত। তাছাড়া তাঁর রচিত উমা-সংগীতগুলিতে ভক্তের আকুতি ও আনন্দ প্রকাশিত হয়েছে। 

(২) রজনীকান্তের ‘নমো নমো নমো জননী বঙ্গ’, ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে  নে রে ও ভাই’ ইত্যাদি গানে তাঁর স্বদেশপ্রীতি প্রকাশিত।

(৩) আবার ‘বাজার হুদ্দা কিন্যা আইন্যা ঢাইলা দিচ্ছি পায়’ ইত্যাদি গানে হাস্যরসের অনাবিল সৌন্দর্য প্রকাশিত।

বিবিধ :  রজনীকান্তের গানে বাউল, কীর্তন ইত্যাদি সহজ-সরল সুরের প্রভাব থাকায় তিনি সহজাত সুরের স্বভাবকবি। তাঁকে বাংলা গানের ইতিহাসে ‘কান্তকবি’ বলা হয় এবং তাঁর গান ‘কান্তগীতি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ‘বাণী’ (১৯০২) ও ‘কল্যাণী’ (১৯০৫) – এই দুটি গানের সংকলনে তাঁর গানগুলি স্থান পেয়েছে। কান্তগীতি যাঁরা গেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন – পান্নালাল ভট্টাচার্য, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত